চায়ের দোকানের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন ?

চায়ের দোকানের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন ? ব্যবসা শুরুর ধাপ গুলো কি কি ? কিভাবে চায়ের দোকান দিবেন বা একটি চা স্টল ব্যবসা কিভাবে করতে হয় ?

চায়ের দোকানের ব্যবসা
How to start tea stall business in Bengali ?

চা হচ্ছে এমন একটা পানীয়, যা প্রাচীনকাল থেকেই যুগ-যুগ ধরে মানুষের অন্যতম প্রিয় পানীয় হিসেবে রয়ে গেছে।

এমনকি, পানীয় জলের পর এই চা-ই হল মানুষের দ্বারা সবথেকে বেশি পান করা পানীয়।

এছাড়াও, সমীক্ষায় পাওয়া গেছে যে, সারা বিশ্বে প্রতিদিন মানুষ প্রায় ৩লক্ষ কোটি কাপ চা পান করেন!

আসলে, আপামর মানবজাতির কাছে চা হল একটা রিফ্রেশমেন্টের জায়গা।

ওয়ার্ক স্ট্রেস কমানো থেকে শুরু করে সকালের খবরের কাগজের সাথে চা না পেলে অনেক মানুষেরই দিন যেন শুরুই হয়না!  

আর, বর্তমানে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে একটু ঝাঁ চকচকে এলাকাতেও আপনি ঠিক একটা না একটা চায়ের ষ্টল বা দোকান পেয়েই যাবেন।

বর্তমানে, যত দিন যাচ্ছে মানুষের চা পানের প্রতি ঝোঁক আরও বেড়ে যাচ্ছে, তার পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে, চা বানানোর বৈচিত্র্যও।

এখনকার মানুষ শুধু লিকার চা বা দুধ চাতেই আটকে নেই, তারা এখন নানা ‘ট্রেন্ডিং’ ভ্যারাইটির চায়ের দিকেও মন দিচ্ছে।

আর, চায়ের দোকানগুলো হয়ে উঠছে পুরোপুরো কমার্শিয়াল ও চোখ ধাঁধানো।    

তাহলে, শুধু চায়ের কথা বাদ দিয়ে একবার এই চা-বিক্রেতাদের কথা ভাবুন তো?

চা বিক্রিতে ভালো মুনাফা হচ্ছে বলেই না তারা আমাদেরকে নানরকম স্বাদের চা খাওয়ার জন্যে আকর্ষিত করছেন!

চায়ের দোকানের ব্যবসা শুরু করার গুরুত্বপূর্ণ ৯টি ধাপ

আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি, একটি চা স্টল ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন ?– এই বিষয়টি নিয়ে।

যাতে, আপনি টি স্টলের ব্যবসা থেকে দারুণভাবে লাভ করতে পারেন।

১. প্ল্যানিং এবং সঠিক কাস্টমার বেস খোঁজা:

চায়ের দোকান দেওয়া কিন্তু ছোট ব্যবসার অন্তর্গত হলেও,

এখান থেকে সফলভাবে ব্যবসা চালানোর জন্যে প্রথমেই একটা ভালো বিসনেস প্ল্যানের দরকার পড়ে।

এবং এরপরে আসে, আপনার মুখ্য ক্রেতা কারা হবে ?

শহর হোক বা গ্রাম, চায়ের ব্যবসা সবসময়েই একটু ভিড় বা ব্যস্ত এলাকাতেই ভালো চলে।

যেখানে মানুষের জমায়েত বেশি সেখানে চা খাওয়ার ধুমও বেশী।

তবে, এই পর্যায়ে আপনাকে আপনার চায়ের কাপ প্রতি মূল্য ঠিক করার পাশাপাশি একটা টি স্টল দেওয়ার খরচের হিসেবগুলোও করতে হবে।

এমনকি, মহিলা উদ্যোক্তাদের মধ্যেও টি স্টলের ব্যবসাটাও কিন্তু বেশ জনপ্রিয় একটা আইডিয়া।

২. সঠিক জায়গা বাছা:

চায়ের ব্যবসায় সফল হতে চাইলে অবশ্যই ভিড় জায়গা বেছে নিন।

যেমন, আপনি রেল বা মেট্রো স্টেশনের কাছে, অফিস-কলেজ পাড়াতে কিংবা ব্যস্ত বাইপাসের ধরেও চায়ের দোকান দিতেও পারেন।

বিশেষ করে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানগুলোর বেশ রমরমা আছে।

এমনকি, লোকাল এলাকার টি স্টলের তুলনায় কোর্ট, হাসপাতাল, রেল স্টেশনের মতো এলাকার দোকানগুলো অনেক বেশি পরিমাণে চা বিক্রি করে থাকে।

যে কারণে, চায়ের মতো স্মল বিজনেসে লোকেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা নেয়।

আর, আপনি যদি একটা বড় চায়ের দোকান খুলতে চান,

তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে বসবার জায়গার পাশাপাশি কম করেও ৫০০-স্কোয়ার-ফিটের মতো জায়গা খুঁজতে হবে।

এর সাথেসাথে আপনাকে চায়ের দোকানের থিম ও ডেকোরেশনের উপরও নজর দিতে হবে।

৩. টি স্টল মালিকানা/ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসা বানানো:

সারা দেশে চায়ের দোকানের ব্যবসা এতো পরিমাণে বেড়েছে, যে বিভিন্ন নামী-দামী চায়ের ব্যবসাগুলো তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি অফার করছে।

এক্ষেত্রে, আপনি চাইলে এইসব কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েও চায়ের স্টল দিতে পারেন।

তবে, সাধারণ চায়ের দোকানের তুলনায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসাতে খরচের পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে।

তার বদলে, আপনি নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজস্ব মালিকানাতে একটা স্বাধীন চায়ের ঠেকের ব্যবস্থাও করতে পারেন।

অন্যদিকে, ফ্র্যাঞ্চাইজি চায়ের দোকানে আপনি টি কাউন্টার বা টি বারের মতো বিভিন্ন ধরণের স্পেশ্যাল চা,

যথা- কেশর, তন্দুরি, টার্কিশ, আরোমা, হারবাল, ফার্মেন্টেড, আইস, আর্ল গ্রে, ওলং টি কিংবা গ্রীন টিও বিক্রি করতে পারেন।  

৪. ব্যবসার সরঞ্জাম জোগাড় করা:

চায়ের ব্যবসা যখন, তখন অবশ্যই চা বানানোর সরঞ্জাম তো জোগাড় করতে হবে।

প্রথমত, আপনাকে চায়ের পাতা, স্টোভ, গ্যাস, উনুন, চায়ের গ্লাস/কাপ, হোল্ডার, কেটেল, চা বানানোর বাসনপত্র, জল, চিনি, দুধ, চায়ের মশলাপাতি ও আরও নানান উপাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

এর পাশাপাশি, প্রয়োজন অনুসারে আপনি দোকানে কর্মচারীর ব্যবস্থাও করতে পারেন।

তবে এক্ষেত্রে, আপনার বাজেট একটা অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।  

৫. ব্যবসাকে বৈধভাবে রেজিস্টার করা:

যতই ছোট ব্যবসার মধ্যে পড়ুক না কেন, চা বিক্রির ব্যবসাতেও আপনাকে দেশীয় সরকারের পার্মিশন ও লাইসেন্সের ব্যবস্থা করতেই হবে।

নিচে কিছু জরুরি বৈধ ব্যবসায়িক রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আলোচনা করা হল,

ক. ব্যবসার নাম নির্ধারণ:

আপনার চায়ের ব্যবসাকে রেজিস্টার করতে হলে একটা ইউনিক নাম ভাবতে হবে।

যাতে, আপনার দোকানের নাম অন্য কোনো ব্যবসাতে আগে থেকেই রেজিস্টার করা না থাকে।

নাহলে, আপনার চায়ের দোকানটিকে রেজিস্টার করাতে অসুবিধা হতে পারে।

খ. কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন:

ছোট ও মাঝারি টি স্টল ব্যবসাগুলোকে আপনি স্বাধীন ব্যবসায়িক উদ্যোগ (start-up/entrepreneurship) হিসেবে নথিভুক্ত করতে পারবেন।

এমনকি, আপনার ব্যবসার মালিকানায় একাধিক মানুষের মালিকানা থাকলে, আপনি প্রাইভেট লিমিটেড হিসেবেও কোম্পানিকে রেজিস্টার করতে পারেন।

গ. ট্যাক্স রেজিস্টেশন:

যেকোনো ব্যবসার জন্যে আপনাকে সরকারের তরফ থেকে একটা ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়ার জন্যে আবেদন করতে হবে।   

ঘ. ট্রেড লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা:

যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই আপনাকে আপনার রাজ্য থেকে একটা স্টেট পারমিট করা ট্রেড লাইসেন্স পেতে হবে।

আপনি যে অঞ্চলে আপনার টি স্টল করতে চাইছেন,

সেখানের স্টেট সেক্রেটারি অফিসের সাথে যোগাযোগ করেই আপনি ট্রেড লাইসেন্সের জন্যে ডকুমেন্ট জমা দিতে পারেন।  

ঙ. ফুড সেফটি অথোরিটির লাইসেন্স পাওয়া:

আপনার দেশের ফুড সেফটি অথোরিটির কাছ থেকে আপনার টি-স্টল ব্যবসার জন্যে লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করুন।  

৬. নূন্যতম বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা:

চায়ের ব্যবসার জন্যে বিনিয়োগের মাত্রাটা সম্পূর্ণভাবে আপনার বিসনেস আইডিয়া ও তার স্কেলের উপর নির্ভর করে।

আপনি যদি ছোট চায়ের স্টল করেন, সেখানে আপনার বিনিয়োগ অনেকটাই কম হবে।

অন্যদিকে, আপনি যদি সুন্দরভাবে ডেকোরেট করে একটা টি কাউন্টার বানাতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেকটা পুঁজিই বিনিয়োগ করতে হবে।

তবে, সবদিক থেকে দেখতে গেলে একটা চায়ের দোকান করতে গেলে কম করে ৫০,০০০ থেকে ১লাখ টাকা খরচ হওয়াটাই স্বাভাবিক।  

৭. লোনের ব্যবস্থা করা:

ক্ষুদ্র ব্যবসা হিসেবে চা বিক্রির ব্যবসাতে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে।

তবে, একটা স্ট্যান্ডার্ড স্টার্ট-আপ খুলতে গেলে ১লাখ টাকা মতো খরচ হতেই পারে।

আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে অনেক সময়েই এতটা টাকা একসাথে পাওয়া সম্ভব হয় না।

তাই, আপনি সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক বা লোনদাতাদের থেকে টাকা লোন নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

অনেক সময়ে সরকারি উদ্যোগপতি যোজনার অধীনেও আপনি লোন পাওয়ার জন্যে আবেদন করতে পারেন।

৮. সুরক্ষা বীমার আয়োজন করা:   

অনেক কষ্টে, অনেক টাকা খরচ করে দোকান বানালেন, অথচ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা আপনার ব্যবসাকে নষ্ট করে দিল!

আর, দুর্ঘটনা এমন একটা জিনিস যেটা যেকোনো সময়েই হতে পারে।

তাই, নিজের দোকানকে সঠিক বীমার আওতায় এনে সুরক্ষিত করুন।

যাতে, কোনো ধরণের দূর্ঘনাই আর্থিক দিক থেকে আপনার চিন্তার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।  

৯. আধুনিকীকরণ করা:

অনলাইন চা অর্ডার করার বিষয়টা খুব বেশি ট্রেন্ডিং না হলেও,

আধুনিকতার ছোঁয়াতে এই বিষয়টাও যে ধীরে-ধীরে জনপ্রিয় হতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই।

ইতিমধ্যেই আমরা অনেকেই গুগল লিস্টিং (Google Business Profile) দেখে নানান হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে বা টি স্টলে আড্ডা দিতে যাই।

তাই, সবার প্রথমেই নিজের চায়ের দোকানকে অনলাইনে লিস্টিং করুন।

কিংবা, নিজের দোকানের একটা ওয়েবসাইটও বানিয়ে নিতে পারেন।

আজকাল মানুষ ইন্টারনেট থেকে নতুন নতুন আড্ডার জায়গা এক্সপ্লোর করতে পছন্দ করে।

তাই, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে নিজের দোকানের পেজ, প্রোফাইল বা অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলোতে নিয়ম করে দোকানের আপডেট দিতে থাকুন।

আমাদের শেষ কথা,,

যাইই হোক না কেন, আপনার চায়ে যদি জাদু থাকে, তাহলে আপনার ব্যবসার সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না।

সুতরাং, চায়ের কোয়ালিটি, পরিষেবার মান এবং সঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে নিজের দোকানকে প্রেসেন্টেবল করে তোলার চেষ্টা করুন,

এতে আপনার টি স্টল অনেকটাই জনপ্রিয়তা পাবে।

আমাদের আজকের চা বিক্রির ব্যবসা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্ট জানাবেন।

অবশই পড়ুন – 

 

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top