চা পাতার ব্যবসা করতে চাই কিভাবে শুরু করব – (লাইসেন্স, লাভ, নিবেশ)

চা পাতার ব্যবসা করতে চাই কিভাবে করব ? চা পাতার ব্যবসার আইডিয়া, কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন, কত টাকা নিবেশ করবেন, ব্যবসাতে লাভ কত হবে ? এই প্রত্যেক বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো। 

চা পাতার ব্যবসা করতে চাই

আমাদের দেশে চা খেতে ভালোবাসেননা এমন মানুষ খুব কমই দেখা যায়।

কারণ ভারতে বেশিরভাগ মানুষ চায়ের সখিন হয়ে থাকে। চা ছাড়া যেন সকলের দিন শুরুই হয়না।

তাই প্রত্যেকটি ঘরে কমপক্ষেও সকাল বিকাল দুইবার চা বানানো হয়েই থাকে। এছাড়া ঘরের বাইরে দপ্তরে, রাস্তায় বা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গা গুলোতে চা খাওয়া লোকেদের অভাব নেই।

চায়ের চাহিদার উপর নজর দিলে অনুমান করা যাবে যে আমাদের দেশে কি পরিমানে চা পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে, অবশই তা ঘরের ক্ষেত্রেই হোক বা অফিস কাছারি, অনুষ্ঠান বাড়ির ক্ষেত্রেই হোক।

চা উৎপাদন করার ক্ষেত্রে বিশ্বে সব দেশের মধ্যে ভারত এক অন্যতম দেশ হিসাবে জানা যায়।

চায়ের চাহিদা অনুসার চায়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যবসা গুলো অবশই লাভবান হয়ে থাকে বলে বলা যেতেই পারে। 

এবং যিহেতু চা তৈরি করার ক্ষেত্রে চা পাতার গুরুত্ব সব থেকে বেশি, তাই চা পাতা বিক্রির ব্যবসা এখনের সময়ে অবশই আপনাকে অধিক লাভ আয় করে দিতে পারবে।

আর তাই আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা চা ব্যবসার বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারব, কিভাবে চায়ের ব্যবসা শুরু করা যায় এবং এর থেকে হওয়া লাভ কতটা হতে পারে।

চা পাতার ব্যবসা শুরু কিভাবে করা হয় ?

তাহলে চলুন বন্ধুরা চা পাতার ব্যবসার সাথে জড়িত নীচে দেওয়া প্রত্যেকটি বিষয়গুলো ভালো ভাবে যেনে নেই।

১. ব্যবসার প্ল্যান বানানো ?

চাপাতার ব্যবসা শুরু করার জন্য ব্যবসাদায়ের সর্বপ্রথম কাজ হলো কোন ধরণের চায়ের ব্যবসা শুরু করতে চায় তার একটি প্ল্যান তৈরি করে নেওয়া।

কারণ চাপাতার ব্যবসা শুধু একটি পর্যায়ে হয়না।

এর সাথে জড়িত বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা করা যায় যেমন কোনো উৎপাদক শুধু চা পাতা জমিতে উৎপাদন করে থাকে, আবার কেও খোলা চাপাতা কিনে নিজের ব্যবসার নাম দিয়ে দোকানে বিক্রি করে থাকে, এছাড়াও অনলাইনে চাপাতা বিক্রি করা, ফ্যাক্টরি খুলে চা-পাতা মেনুফ্যাকচারিং ব্যবসা করা ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত থাকে এই ব্যবসা।

তাই কোন পর্যায়ে ব্যবসা করা হবে সেই প্ল্যান হিসেবে ব্যবসাদারের নিবেশ করা পুঁজির পরিমান নির্ভর করে থাকে।

কিন্তু এই আর্টিকেলে আমরা সরাসরি ভাবে চাপাতা কিনে এনে সেগুলোকে আবার বিক্রি করে কিভাবে ব্যবসা করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।

2. চা-পাতা কোথার থেকে কেনা যায় ?

আপনি যদি বড়ো স্তরে চাপাতার ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনার অনেক পরিমানে চাপাতার প্রয়োজন পড়বে।

তাই চাপাতা উৎপাদন করা কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে যাতে আপনি সঠিক দরে পুরো বছরের জন্য একসাথে চাপাতা কিনে নিতে পারেন।

বছরের কোন সময় চাপাতার ফসল কাটা হয়ে থাকে সেই দিকে ধ্যান রেখে ব্যবসার জন্য চাপাতা ক্রয় করতে হয়।

কারণ অফ সিজানে যদি আপনি চাপাতা ক্রয় করেন তাহলে তুলনামূলক ভাবে আপনার অধিক দাম দিয়ে চা-পাতা কিনতে হবে। 

তাই ব্যবসা করার জন্য গরমের সময় চাপাতা একেবারে ভালো করে স্টোর করে নেওয়া দরকার।

আপনি যদি অনেক পরিমানে চাপাতা কিনে থাকেন এবং প্রতি বছর কিনে থাকেন তাহলে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষকদের সাথে কথা বলে একটি সীমিত দাম নিশ্চত করে নিতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি যদি দোকান খুলে চাপাতা বিক্রি করতে চান তাহলে পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকেও খোলা চাপাতা কিনে এনে নিজের ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বা খোলা হিসেবেই চা-পাতা গুলো বাজারে বিক্রী করতে পারেন।

৩. চা-পাতা বিক্রি করার জন্য জায়গার নির্বাচন ?

চা-পাতা বিক্রি করার ব্যবসা দুইরকম ভাবে শুরু করা যায়। এক হলো দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায় বা আবার আপনি অনলাইনেও চা-পাতা বিক্রি করতে পারবেন।

এছাড়া চাইলে ডিস্ট্রিবিউটার হিসেবেও চা-পাতা বিক্রির ব্যবসা শুরু করা যায়।

এক্ষেত্রে আপনি যদি দোকান নিয়ে চাপাতা বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনার দোকান কোনো বাজারে অর্থাৎ ভিড় ভার এলাকায় হওয়া উচিত।

কারণ দোকান খোলার ক্ষেত্রে জমজমাট জায়গা না হলে গ্রাহক চট করে পাওয়া সম্ভব হয়ে দাড়ায়না ফলে ব্যবসা ঠিক মতে চলা সম্বভ না।

এছাড়া, আপনি যদি অনলাইন চাপাতা বিক্রি করার কথা ভাবছেন তাহলে আজকাল বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে সাধারণ একটি একাউন্ট তৈরি করেই নিজের ব্র্যান্ডের চাপাতা বিক্রি করতে পারবেন।

অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার ভিড়ভার এলাকার প্রয়োজন হবেনা আপনি ঘর থেকে বা কোনো গোডাউন ভাড়া করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

অনলাইনে এই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনার কেবল একটি স্টক রাখার জন্য জায়গার প্রয়োজন হবে।

৪. লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন করা ?

চাপাতা ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা শুরু করতে হবে।

তাই আপনি যখন আপনার চাপাতা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করবেন সেই চাপাতা কোনো ভাবে যাতে ক্ষতিকর না হয় সেটা আগে লেব টেস্টিং করে সুনিশ্চিত করে নিতে হবে।

এর জন্য আপনি নিজের ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, নিজের একটি ব্রান্ডের নাম সহ প্রথমে ব্যবসার রেজিস্টার করাটা জরুরি এবং এর সাথে FSSAI (Food Safety and Standards Authority of India) এবং ট্রেড লাইসেন্স অবশই বের করে নিতে হবে।

এছাড়া, আপনার দেশে যদি অন্যান্য কোনো জরুরি registration ইত্যাদি থেকে থাকে, তাহলে সেগুলোর বিষয়ে জেনেনিন এবং সঠিক প্রক্রিয়ার সাথে কাজ শুরু করুন।

এইসব প্রক্রিয়া শেষ করার পর আপনি নিজের দোকান খুলে বা ডিস্ট্রিবিউটার খুলে শহরের ছোটো ছোটো দোকানে বা সরাসরি গ্রাহক দের চাপাতা সাপ্লাই করার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

৫. ব্যবসার জন্য কত টাকা নিবেশের দরকার ?

চাপাতা ব্যবসা শুরু করার জন্য নিবেশ করা রাশি নির্ভর করে আপনি কোন স্তরে ব্যবসা শুরু করবেন সেটির ওপরে। 

যদি ছোটো স্তরে চাপাতা বিক্রি শুরু করতে চান তাহলে বেশি টাকা বিনিয়োগ করার দরকার হবেনা। 

যেকোনো ব্র্যান্ডেড ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে বা কোনো হলসাল ডিস্ট্রিবিউটার থেকে ১০ থেকে ১৫হাজার টাকার খোলা চাপাতি কিনে ব্যবসা শুরু করা যায়।

এক্ষেত্রে যদি আপনি নিজের ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে মার্কেটে দোকান নিয়ে  হলসেল বা রিটেলে চাপাতা বিক্রি করে এই ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা আপনাকে নিবেশ করতে হবে।

দোকান বা ডিস্ট্রিবিউটার খোলার জন্য টাকার নিবেশ অধিক বেশি হয়ে থাকে, কারণ সেক্ষেত্রে আপনাকে নিজের ব্র্যান্ড রেজিস্টার করাতে হয় এবং FSSAI লাইসেন্স বের করতে হয়।

রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্স বানাতেই অনেক টাকা লেগে থাকে যদিও ব্যবসার জন্য ও একটি ভালো জায়গাতে দোকান আপনাকে নিতে হবে যার জন্যে প্রায় ২ লাখ টাকা আপনাকে খরচ করতে হবে। 

তাই আপনি কোন স্তরে ব্যবসা শুরু করবেন সেটার উপরেই নিবেশ করা রাশি নির্ভর করে।

৬. ব্যবসার মার্কেটিং করা ?

যখন আপনার ব্যবসা একেবারেই নতুন, তখন লোকেরা আপনার ব্যবসার বিষয়ে কিছুই জানবেনা। 

আর তাই, আপনাকে সঠিক মার্কেটিং এর কৌশল গুলো ব্যবহার করে নিজের চা-পাতা ব্যবসার মার্কেটিং চালিয়ে যেতে হবে। 

সঠিক ভাবে ব্যবসার মার্কেটিং করার ফলে, অনেক কম সময়ের মধ্যে লোকেরা আপনার চা-পাতার দোকান বা ব্যবসার বিষয়ে জানতে পারবেন, ফলে আপনার বিক্রি বাড়বে। 

ব্যবসার মার্কেটিং করার জন্য নিচে দেওয়া উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

  • ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসার প্রচার করুন।
  • লিফলেট চাপিয়ে জায়গায় জায়গায় বিতরণ করে প্রচার।
  • সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল এর মাধ্যমে ব্যবসার মার্কেটিং করুন।
  • নিজের visiting / business card চাপিয়ে রাখুন এবং লোকেদের দিতে থাকুন।

এছাড়াও চাপাতার মার্কেটিং করার সময় প্যাকেজিং এর উপর ধ্যান দেওয়া দরকার কারণ আমরা যখন কোনো নতুন জিনিস কিনি সেটার প্যাকেজিং আগে দেখি তারপর কুয়ালিটিতে আসি। যখন আমাদের বস্তুর প্যাকেট দেখে ভালো লেগে থাকে তখন আমরা সেই বস্তুটি কিনার জন্য ইন্টারেস্ট দেখিয়ে থাকি।

আজকাল বেশিরভাগ ব্যবসা নির্ভর করে আপনি কতটা মার্কেটিং করতে পারছেন তাই ব্যবসা শুরু করার প্রথম দিকে আপনাকে মার্কেটিং খুব ভালো ভাবে করতে হবে।

একবার যদি আপনার বিক্রি করা চাপাতার কোয়ালিটি এবং প্যাকেজিং গ্রাহকের ভালো লেগে থাকে তাহলে গ্রাহক নিজে আপনার কাছে আসবে।

৭. কতো টাকা লাভ করা যায় ?

আপনার লাভ নির্ভর করে আপনি কোন কোয়ালিটির চাপাতা কতো দামে বিক্রি করছেন সেটার ওপরে।

চাপাতার কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে চাপাতার দাম অবশই নিশ্চিত করা যায়।

ভালো কোয়ালিটির এবং বড়ো ব্র্যান্ডের চাপাতা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম বিক্রি হয়ে থাকে বাজারে।

উদাহরণ সরূপ, আপনি যদি ১০ থেকে ১৫ কিলো চাপাতা ১৮০ টাকা করে প্রতি কিলোগগ্রামে কিনে ২২০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম বিক্রি করেন তাহলে আপনি প্রতিদিন ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মুনাফা লাভ করতে পারবেন।

এই হিসাবে প্রতি মাসে আপনার কামাই ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা আরামে হয়ে যাবে। 

ভবিষ্যতে আপনার ব্যবসায় লাভ বাড়ার সাথে সাথে আপনি আরো অধিক বেশি পরিমানে মাল উঠিয়ে বড় স্তরে ব্যবসা করে অধিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন।

 

Conclusion

তাহলে বন্ধুরা, আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যম আমরা চা পাতার ব্যবসা কিভাবে শুরু করতে হয়, ব্যবসার আইডিয়া, বিনিয়োগ, লাভ, প্রক্রিয়া এবংব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হয় সেগুলো সবটাই বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলাম।

আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই কাজে আসবে।

যদি আমাদের আর্টিকেল আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে আর্টিকেলটি অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।

 

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top