জীবন মানে কি ? (The meaning of life in Bengali)

জীবন মানে কি ? জীবন মানে কি যুদ্ধ ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই প্রশ্ন গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। 

এই পৃথিবীতে জীবন-মৃত্যুর খেলা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। 

ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র কীট থেকে শুরু করে সভ্যতা-শ্রেষ্ঠ মানুষ এই খেলার মধ্যে থেকে যাওয়া পেয়াদা মাত্র। 

আমরা রোজই দিনের শুরুতে সূর্যের আলোয় ঘুম থেকে উঠি, দৈনন্দিন আমাদের জীবনযাত্রার নানান কাজ করি আবার সূর্য পাটে যাওয়ার সাথে সাথে আবার আমরা ঘুমিয়েও পড়ি। 

তবে, আমরা কি কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখেছি, যে আদৌ এই জীবন কি বা জীবনের মানেই বা কি ?

যদি আপনাদের মনে জীবনের কি মানে- সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন এসে থাকে, তাহলে এই আর্টিকেলে আমরা আপনার সেই প্রশ্নের যথা সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। 

তাহলে, প্রথমে আমরা জানি, জীবন বা ‘লাইফ’ বলতে আমরা কি বুঝি ?

জীবন মানে কি ?

জীবন মানে কি
জীবন বলতে কি বুঝায় ?

সোজা ভাষায়, জীবন হল এমন একটি চালিকা শক্তি যা জৈব পদার্থের অব্যাহত অস্তিত্বের জন্য একান্তই জরুরি। 

বা, জীবন বলতে এমন একটি নীতি বা শক্তিকে বোঝায়, যা যেকোনো জীবন্ত প্রাণীর স্বতন্ত্র একটি গুণ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। 

প্রকৃত অর্থে, এই জীবন শব্দটির অর্থ সম্পর্কে নানান বিতর্ক রয়েছে। 

বাস্তবে, জীবনের আক্ষরিক কোনো সংজ্ঞা দেওয়া কোনো বিশেষজ্ঞের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। 

আমরা, কেবলমাত্র জীবনকে অনুভব করতে পারি ও এই জীবনকে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।

দর্শন তত্ত্ব অনুসারে, জীবন হল অস্তিত্বের একটা দিক; যেটা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া, কার্যকলাপ, প্রতিক্রিয়া, মূল্যায়ন ও বৃদ্ধির (প্রজনন এবং বিপাক) মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বিবর্তিত হয়।

বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টট্লের মতে, একটি আত্মা হল কোনো জীবদেহের বাস্তবতা, যা সেই দেহটিকে জীবন প্রদান করে। 

আর, যেখানে জীবনের অর্থ হল আত্মনির্ভরশীলতা, বৃদ্ধি এবং প্রজননের ক্ষমতালাভ করা।

আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, এই জীবন হল উদ্ভিদ ও প্রাণীদের সেই সম্পত্তি বা গুণ, যা তাদের অজৈব পদার্থ বা মৃত জীব থেকে পৃথক করে তোলে। 

আবার, বিজ্ঞানের ভাষা অনুযায়ী, জীবন বলতে যেকোনো জীবের কোষীয় জৈব রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ বা প্রক্রিয়াগুলোকেও (যেমন- পুষ্টি গ্রহণ, শক্তির সঞ্চয় ও ব্যবহার, বৃদ্ধি, বর্জ্য নির্গমন, প্রজনন ইত্যাদি) বোঝানো হয়ে থাকে।

তাই, আমরা বলতেই পারি, যে জীবন মানে কোনো জীবন্ত প্রাণীর বৈশিষ্ট্যগত অবস্থা বা দশাকেও বোঝানো হয়ে থাকে। 

তবে, এখন প্রশ্ন আসতেই  পারে, যে আসলেই জীবনের মানেটা কি ?

জীবনের সংজ্ঞা বা অর্থ:

জীবন হল যেকোনো জীবের প্রধান অস্তিত্বের লক্ষণ; যা প্রক্রিয়া, ক্রিয়াকলাপ, প্রতিক্রিয়া, মূল্যায়ন এবং বৃদ্ধির (প্রজনন এবং বিপাক) দ্বারা সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হতে থাকে। 

জীব ও নির্জীব বস্তুর (বা অজীব জিনিস) মধ্যেকার প্রধান পার্থক্য হল এই, যে জীবন শারীরিক ও চেতনার বিকাশের জন্য শক্তির ব্যবহার করে।

জীবন হল এমন একটি জিনিস, যার সাহায্যে জীবদের মধ্যে শারীরিক তথা মানসিক বৃদ্ধি ঘটে ও সময় শেষ হয়ে এলে, শেষ পর্যন্ত সেই জীবদের মৃত্যু ঘটে থাকে। 

তাই, বলা যেতে পারে, যেখানে জীবন আছে, সেখানে মৃত্যুও অবশ্যই থাকবে। 

অর্থাৎ, মৃত্যুর পর জীবনের আর কোনো বৃদ্ধি বা প্রসার ঘটে না।

উদাহরণস্বরূপ বলে যেতে পারে, যে ভাইরাসের মতো অণুজীব থেকে শুরু করে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা যেকোনো জীব কিন্তু উদ্দীপনায় সাড়া দেয়, বেড়ে ওঠে ও প্রজনন করতে সক্ষম হয়। 

অন্যদিকে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো হল নির্জীব, কারণ তারা উপলব্ধি করতে পারলেও, তাদের জৈবিক বিকাশ হয় না ও তারা প্রজননে অক্ষম হয়ে থাকে। 

আর, জ্ঞান জীবনকে নির্ধারণ করে না; বরং কোনো প্রাণীর মৃত্যুর দিকে প্রসারণ এবং শারীরিক পূর্ণতালাভই তাকে মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যায়। 

এই কারণেই শুধুমাত্র জীবিত পদার্থেরই মৃত্যু ঘটা সম্ভব।

জীবনের দর্শন:

জীবন হল তার নিজস্ব আকস্মিকতার উপলব্ধি। 

তবে, এখানেই শেষ নয়, আসলে জীবন হল প্রত্যেকটি জীবের কাছে তাদের জীবনের অর্থ তৈরির মাধ্যম মাত্র। 

তাই, জীবন হল এমন একটি অবিরাম প্রক্রিয়া যা ক্রমশই বয়ে চলে ও আমাদের মূল্যবোধ ও অর্থ তৈরির মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। 

সুতরাং, জীবন চিরস্থায়িত্বের সীমা অতিক্রম করে; অর্থাৎ, আমাদে জীবন সবসময় বর্তমান তৈরী করার মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলে। 

জীবনে গ্রহণযোগ্যতাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

সীমাবদ্ধতাকে মেনে নেওয়া, কারোর দায়িত্ব গ্রহণ করা কিংবা অন্যান্য মানুষের অস্তিত্ব ও পছন্দকে মেনে নেওয়াও কিন্তু জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। 

জীবন কখনোই স্থির বা পরম নয়; বরং জীবন হল ধোঁয়াশাময়। 

যেখানে জীবন হল অস্তিত্বের দ্বারা ঘটে যাওয়া সম্ভাবনামাত্র। 

তাই, বলা যেতে পারে, যে জীবন হল মানবতার চেতনা আর একাধারে বিশ্ব ও মহাবিশ্বের সম্পর্কে তৈরী হওয়া তাদের উপলব্ধি মাত্র। 

সেক্ষেত্রে, বলা যায়, যে জীবন যেমন দুঃখের তেমন জীবনই হল মৃত্যু। 

আবার, জীবনই হল দুর্ভোগ ও ধ্বংসের প্রতীক। 

কিন্তু, জীবন যেমন সুখেরও, আবার জীবন বেঁচে থাকারও উপায় বটে। 

জীবন আনন্দময় ও সৃজনশীলতাপূর্ণ। 

অন্যদিকে, এই জীবন কিন্তু বেঁচে থাকার একটি কারণ, উল্টে কোনো মরার কারণ মোটেই নয়। 

এটি যৌবন থেকে বার্ধক্যর দিকে এগিয়ে চলা একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্যেই সবকিছু থাকে। 

সব কিছু মিলিয়ে, জীবন সুন্দর- আর যা কিছু কুৎসিত তাই-ই হল ক্ষণস্থায়ী। 

মানুষের জীবন হল প্রেম ও ঘৃণার আধার, কিন্তু জীবন তখনই পরিপূর্ণতা পায়, যখন আমরা অন্যদের সাথে থাকি। 

ভয় ও ঘৃণার জীবন বাস্তবে কোনো জীবনই নয়। 

অনেকের কাছে আবার জীবনই হল পরমাত্মা বা ঈশ্বর। 

আমরা হয়তো সবাই তাঁরই সন্তান। 

তবুও, আমরা পৃথিবীর সৃষ্ট জীবকুলের অন্তর্গত।

জীবনের অর্থ নিয়ে অতীতকাল থেকেই দার্শনিকেরা নানান মতবাদ পোষণ করে আসছেন। 

তবে, দর্শনশাস্ত্র অনুযায়ী প্রতিটা মানুষের জীবনের অর্থ একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে থাকে। 

তাই, প্রতিটা মানুষের জীবন সম্পর্কে দর্শনটা ভিন্ন ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কিছু ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, তাদের জীবন হল ঈশ্বরের দান। 

আবার, কোনো কোনো মানুষের জীবনের অর্থ হল সৎ পথে থেকে অন্য মানুষের কল্যাণ সাধন করা। 

সেক্ষেত্রে, দেখা যায় যে, প্রতিটা মানুষের জীবনধারা ও জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণভাবেই বা আংশিকভাবে ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।

এমনকি, মানুষের জীবনের অর্থ নির্ভর করে তাদের পরিবেশ, সামাজিক অবস্থান, চিন্তাভাবনা ও আরও অন্যান্য কারণের উপর।

মানুষের সভ্যতা যত উন্নত হয়েছে, ততই মানুষের জীবনযাপনে জটিলতা বেড়েছে। 

আর, পাঁচটা সাধারণ প্রাণীর জীবন খাওয়া-দাওয়ার সংগ্রহ, আরাম করা ও প্রজননের উপরই নির্ভরশীল; আর সেই জীবনে জটিলতা প্রায় নেই বললেই চলে। 

কিন্তু, সভ্য মানুষের চিন্তাভাবনা জটিল ও বহুমুখী হওয়ার ফলে তাদের জীবনের অর্থেও এসেছে নানান পরিবর্তন। 

তাই, মানুষ ভুলে গেছে, যে জীবন নিতান্তই সরল এবং বৃদ্ধি ও প্রজননই সভ্যতার শুরুতে তাদের সুখী জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল।

জীবন মানে কি যুদ্ধ ?

ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী, ‘সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’ বা যোগ্যতমের উদ্বর্তনই প্রাণীকুলের জীবনের অস্তিত্বকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। 

অর্থাৎ, মানুষ তাদের সূচনা লগ্ন থেকেই জীবন রক্ষার তাগিদে লড়াই করে এসেছে। 

গুহামানব থেকে বর্তমান সভ্যতার মানুষের রূপলাভ করতে লড়তে হয়েছে অসংখ্য জীবনধারণের লড়াই। 

যেখানে জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ লড়াই করেই বাঁচতে শিখেছে, তাই বলাই যেতে পারে যে জীবন মানেই যুদ্ধ।

ভয়ানক মহামারীর বিরুদ্ধে জীবনরক্ষার লড়াই হোক, শত্রুপক্ষের বোমার সামনে পড়ে জীবন বাঁচানোর লড়াই, বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসার লড়াই বা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাকরি রক্ষার লড়াই বা পরীক্ষা দিয়ে ভালোভাবে পাশ করার লড়াই- মানুষের এখনকার জীবনধারা সম্পূর্ণরূপেই হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্নিতপ্ত যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। 

যারা এই যুদ্ধে পরাজিত হয়, তারা নিজেদেরকে আবার প্রস্তুত করে অন্য ধরণের সংগ্রামের জন্যে।

আর, হার স্বীকার করে জীবন যুদ্ধের অবসান ঘটানো মানেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়া। 

তাই, অস্তিত্ব রক্ষা হোক কিংবা সাধারণ জীবনধারণের ব্যবস্থা করা, মানুষ প্রতিনিয়তই নিজেদের জীবন ধারণ করার কারণ নিয়ে লড়াই করে চলেছে। 

তবে, এখানে এক মানুষের চ্যালেঞ্জ বা যুদ্ধ অন্য মানুষের তুলনায় একেবারেই আলাদা। 

তাই, আজীবন মানুষকে লড়াই করেই চলতে হয়।

আজকে আমাদের এই ‘জীবনের মানে‘ নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল। 

লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।  

 

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top