বন্ধুরা, আজকের এই আর্টিকেলটির দ্বারা আমরা টাকা জমানোর উপায়, কৌশল, পদ্ধতি এবং টেকনিক এর বিষয়ে জানতে পারবো।
বর্তমান সময়ে সকলেই অধিক থেকে অধিক টাকা ইনকাম করতে এবং জমাতে চান যাতে ভবিষ্যত জীবনে কোনো সমস্যা হলে টাকার জন্য ভাবতে না হয়।
টাকা কম বেশি সকলেই কামিয়ে থাকে কিন্তু সঠিক ভাবে টাকা খরচ করার কৌশল কিন্তু সবাই জানেননা।
টাকা জমানোর টেকনিক গুলো জানা থাকলে তখন আপনারা অধিক টাকা জমাতে পারবেন এবং সময়ে এই জমিয়ে রাখা টাকা গুলো আপনার অনেক কাজে আসবে।
এমনিতে আপনারও যদি টাকা জমাতে চান তাহলে আগে আপনাকে টাকা বাঁচাতে শিখতে হবে।
অনেক মানুষ এমন থাকেন যারা টাকা জমানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে থাকেন, কারণ তাদের খরচ এতটাই বেশি যে শেষে সেখান থেকে জমানোর জন্য কিছুই থাকেনা।
এক্ষেত্রে আপনি যদি ভাবেন অধিক থেকে অধিক টাকা কামাতে পারলেই আপনার financial problems গুলো ঠিক হবে,
তাহলে জেনেরাখুন যতক্ষন পর্যন্ত আপনি টাকা বাচানো শিখতে না পারছেন আপনার এই সমস্যা চিরকাল থেকেই যাবে।
তাই এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা কিভাবে টাকা জমানো যায়, কি কি উপায়ে টাকা বাচানো সম্ভব এবং টাকা জমানোর বিভিন্ন কৌশলের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবো।
নীচে দেওয়া টাকা জমানোর পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে আপনারা টাকা বাচাতে শিখতে পারবেন।
টাকা জমানোর উপায়, কৌশল এবং টেকনিক
তাহলে বন্ধুরা আপনি যদি আপনিও চাইছেন মাসের মাইনে থেকে কিছু অধিক টাকা আলাদা করে রেখে সেগুলোকে জমাতে, তাহলে নিচে দেওয়া টেকনিক বা উপায় গুলো মেনে টাকা জমাতে হবে।
এছাড়া, টাকা পকেটে থাকলে আমাদের অনেক রকমের প্রয়োজন গুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
তাই, এক্সট্রা টাকা হাতে থাকলে সেগুলোকে খরচ করার অভ্যেস আপনাকে বদলে ফেলতে হবে।
তাহলে চলুন, কিভাবে টাকা জমানো যায় সেক্ষেত্রে টাকা জমানোর কৌশল এবং পদ্ধতি গুলো এক এক করে জেনেনেই।
১. মাসের বাজেট বানানো
Monthly বাজেটের সাহায্যে আমরা পুরো মাসে হওয়া অতিরিক্ত খরচ গুলোতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি।
কারণ মাসের একটি বাজেট বানাতে পারলে তখন শুরুতেই আমরা বুঝতে পারবো যে কত টাকা আমাদের খরচ হবে এবং কত অতিরিক্ত টাকা খরচের পরেও আমাদের কাছে থাকবে।
এখন প্রশ্ন হলো monthly budget কি?
Monthly বাজেট হলো পুরো মাসে কোথায় কত টাকা খরচ হবে তার একটি তালিকা তৈরি করে নেওয়া।
এর সাহায্যে মাসের শেষে আমরা জানতে পারি কোথায় কত টাকা খরচ করা হয়েছে এবং কোথায় অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
তখন আপনি বুঝতে পারবেন কোথায় কোথায় আপনাকে টাকা বাঁচাতে হবে।
Monthly বাজেট বানানোর জন্য একটি ডায়েরিতে ৩০দিন হিসাবে পুরো মাসের একটি লিস্ট তৈরি করে নিতে পারেন বা কম্পিউটার থাকলে এক্সসেল সিটে নিজের monthly বাজেট বানাতে পারেন।
প্রত্যেক জরুরি খরচ গুলো তাতে লিখুন এবং এর সাথে প্রত্যেক দিন কিসে কিসে আপনি টাকা খরচ করছেন সেটাও লিখতে হবে।
এর ফলে কোথায় কত টাকা খরচ হয়েছে আপনার হিসাব জানা থাকবে এবং সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় খরচ গুলো দেখে নিতে পারবেন এবং পরের মাস থেকে
সেই অপ্রয়োজনীয় খরচ গুলো না করে টাকা জমাতে পারবেন।
তাই, টাকা জমানোর ক্ষেত্রে monthly বাজেট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. অনলাইন কেনা কাটায় গুরুত্ব দেওয়া
অনলাইন কেনাকাটার দ্বারা আমরা ভালো টাকা বাচাতে পারি।
হে আপনি ঠিক শুনেছেন, অনলাইন কেনাকাটায় অনেক রকম সুবিধা থাকে যেমন বাজারের তুলনায় ভালো ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় এবং উৎসব পর্ব হলে বা বছরের শেষে স্পেশাল অফার পাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও অনলাইন কেনাকাটায় return policy অবশই থাকে যার ফলে কোনো জিনিস পছন্দ না হলে ফেরানোর সুবিধা থাকে এবং টাকা কয়েকদিনের ভিতরে ব্যাংক একাউন্টে ঢুকে যায়।
কিন্ত, এক্ষেত্রে আপনি যদি অফলাইন কেনাকাটা করতে চান তাহলে সেখানে যাওয়া আসার ভাড়া খরচ করতে হবে এবং জিনিস পত্রের উপর ভালো ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়না এবং জিনিস ঘরে নিয়ে আসার পর পছন্দ না হলে ফেরানোর সুবিধা থাকেনা।
তাই যতবেশি পারেন অনলাইন কেনাকাটা করার অভ্যাস করুন।
অনলাইন কেনাকাটার ফলে আমাদের সময় নষ্ট হয়না সাথে কিছুটা টাকারও সেভ হয়ে থাকে।
৩. ইলেকট্রিক বিল থেকে টাকা বাচানো
ইলেকট্রিক বিল থেকেও আমরা টাকা বাচাতে পারি।
কিন্তু অলসতার কারণে এই বিষয়ে অনেকের ধ্যান থাকেনা তারা ভাবেন এই ছোট ছোট জিনিসে কত আর টাকা বাচানো সম্ভব তাই বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়।
আমরা যদি কিছু ভালো অভ্যাস বানাতে পারি তাহলে ইলেকট্রিক বিল থেকেও মাসে ভালো টাকা বাচাতে পারি।
উদাহরণস্বরূপ:- টিউব লাইট, ফ্যান, টিভি ইত্যাদির প্রয়োজন না হলে বন্দ করে রাখা।
ঘর থেকে বের হলে লাইট, ফেন, ফোন কম্পিউটার চার্জ হয়ে গেলে সুইচ অফ করে বের হওয়া এই ধরণের অভ্যেস করতে হবে।
আমাদের এই ছোটো ছোটো অভ্যাস গুলোই ইলেকট্রিক বিল বাচানোর সাথে সাথে সেই অতিরিক্ত টাকা জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
৪. ক্রেডিট কার্ড থেকে বাচা
বর্তমান সময়ে বেশীরভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ফলে ব্যাংক আপনাকে দরকারের সময় টাকা খরচ করার সুবিধা দিয়ে থাকে।
এর সাথে, আমার অনলাইনে বা অফলাইনে যেকোনো জিনিস EMI এর সাথে কেনার সুবিধা ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে পেয়ে থাকি।
কিন্তু সবকিছুর যেমন উপকারিতা থাকে ঠিক তেমনি অপকারিতাও থাকে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার সময় আপনাকে কিছু বিশেষ বিষয়ে ধ্যান দিতে হবে যেমন আপনাকে ততটাই খরচ করতে হবে যা আপনার ব্যাংক একাউন্টে আগের থেকে জমা রয়েছে বা যতটা আপনার মাসে ইনকাম হয়ে থাকে।
কারণ ক্রেডিট কার্ডের বিল দেওয়ার একটি নিৰ্দিষ্ট সময় থাকে সেটি চলে গেলে বিল দেওয়ার সাথে সাথে আপনাকে এর উপর ফাইন এবং ইন্টারেস্ট দিতে হয়।
এছাড়া, credit card এর একটি annual maintenance charge থাকে যেটা প্রত্যেক বছর আপনার থেকে নেওয়া হবে।
তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে এগুলো বিষয়ে জেনে নেওয়া খুবই জরুরি।
আমার হিসাবে যারা অপ্রয়োজনীয় খরচের বা কেনাকাটার ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে থাকেন তারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করাই ভালো।
তাই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার যত বেশী সম্ভব কম করে আমরা টাকা বাচাতে পারি।
৫. পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা
আজকাল মানুষ খুব বেশি পরিমাণে ব্যক্তিগত বাহন ব্যবহার করে থাকে এক্ষেত্রে যদি পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা যায় তাহলে ভালো পরিমানে টাকা বাঁচানো সম্ভব।
কারণ আজকাল পেট্রোলের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে।
উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির যদি দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে হয় তখন সে নিজের গাড়ি নিয়ে যেতে বেশী পছন্দ করে থাকে।
এবং পরে যখন হিসাব করে থাকে তখন দেখা যায় পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের তুলনায় অনেক বেশী পরিমানে পেট্রোলের খরচ হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতেন তাহলে ব্যক্তিগত বাহনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে টাকা খরচ হতো।
এছাড়াও সামনে কোথাও যেতে হলে আমরা পায়ে হেটে যেতে পারি বা অফিসে যেতে হলে পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারি ফলে টাকা বাচানোর সাথে প্রদুসন কমাতেও সাহায্য হয়ে থাকে।
৬. মাসের রাশন বাল্ক (bulk) হিসাবে নগদ কেনা
মাসের রাশন সবসময় নগদ এবং একসাথে কিনে রাখা উচিত।
যখন আমরা বাকি করে রাশন কিনে থাকি তখন আমরা প্রয়োজন ছাড়া জিনিসও সাথে কিনে নেই যেগুলোর কোনো দরকার থাকেনা।
তাই নগদ টাকা দিয়ে রাশন উঠালে আমাদের মাথায় এটা থাকবে যে টাকা এখনই দিতে হবে ফলে প্রয়োজন ছাড়া কোনো জিনিস কেনা হয়না।
এর ফলে আপনারা অপ্রয়োজনীয় জিনিসের খরচ বাচাতে পারেন।
যদিও আপনি বাকি করে রাশন উঠান তাহলেও পুরো মাসের রাশনের একটি লিস্ট তৈরি করে তারপর জিনিস কেনা উচিত।
এর দ্বারা রোজ রোজ দোকান থেকে জিনিস আনা থেকে বাচতে পারবেন কারণ খোলা খোলা জিনিস আনলে আমাদের কোনো হিসাব থাকেনা এবং মাসের শেষে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।
টাকা বাচানোর এই উপায়টি আমি নিজের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে থাকি।
৭. শেষ হওয়া লোনের EMI জারি রাখা
এখন আপনারা ভাবছেন শেষ হয়ে যাওয়া লোনের EMI কেন জারি রাখবো কারণ EMI যতো জলদি শেষ হয় মানুষ ততটাই শান্তি পেয়ে থাকে।
এই কথাটি বলার অর্থ হলো, আপনাকে শেষ হওয়া EMI ব্যাংকে জমা দিতে হবে না তবে এই EMI আপনি নিজের জন্য জমা করতে পারেন।
আপনি সেই EMI এর টাকাটি দিয়ে কোনো রেকারিং খুলতে পারেন বা mutual fundএ SIP খুলতে পারেন।
ফলে আপনার একটি ভালো পরিমাণের টাকা জমা হতে থাকবে।
কারণ EMI যখন চলতে থাকে আমরা যেভাবেই হোক টাকাটি দিয়ে থাকি কিন্তু EMI শেষ হওয়ার পর সেই টাকা কোথায় খরচ হয়ে যায় আমাদের ধ্যান থাকেনা।
তাই টাকা বাচানোর এবং জমানোর ক্ষেত্রে আপনারা এই কৌশলটি ব্যবহার করতে পারেন।
৮. সঠিক জায়গায় টাকা ইনভেস্ট করা
আপনারা যদি টাকা জমাতে চান তাহলে সঠিক জায়গায় টাকা ইনভেস্ট করা দরকার।
বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের টাকা FD বা RD তে ইনভেষ্ট করে থাকে কারণ Mutual ফান্ড এ টাকা ইনভেস্ট করতে তারা সাহস পায়না।
কিন্তু অল্প Risk নিয়ে যদি Mutual ফান্ডে এর স্কিম গুলোতে যেমন Equity, bond ইত্যাদি স্কিমে ইনভেস্ট করা যায় তাহলে ভালো Return পাওয়া যায় যা ব্যাঙ্কের তুলনায় অনেকবেশি।
এক্ষেত্রে long term স্কিম গুলোতে ইনভেস্টমেন্ট করা ভালো যদি আপনি ভালো Return পেতে চান।
কিন্তু অনেকেই টাকা loss হওয়ার ভয়ে Mutual ফান্ডে টাকা লাগাতে চান না।
Share বা Equity ইত্যাদি scheme গুলোতে Risk প্রচুর থাকে যদিও terms এবং condition গুলো ভালো করে বুঝে এবং সঠিক জ্ঞান নিয়ে ইনভেস্ট করা দরকার।
৯. খরচ কমানো দরকার
আপনি যদি মাসে ১ লাখ টাকা আয় করছেন এবং আপনার মাসের খরচ ৭০ হাজার টাকা তাহলে অধিক টাকা কামিয়েও সেটা আপনার জন্য সব সময় কম হয়ে দাঁড়াবে।
তাই, আপনি যতই বা টাকা ইনকাম করছেন তার ৫০% সব সময় সেভ করার চেষ্টা করবেন।
আমাদের জীবনের চাহিদা, অপদার, শখ ইত্যাদি প্রচুর পরিমানেই থাকে এবং অধিক টাকা হাতে আসলে চাহিদার তালিকা বাড়তেই থাকে।
তাই, যতই বা কামাচ্ছেন তার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমানের টাকা প্রত্যেক মাসে সেভ করতেই হবে।
আপনাকে অপ্রয়োজনীয় জায়গাতে বা জিনিসের ক্ষেত্রে টাকা খরচ করার অভ্যেস পাল্টে ফেলতে হবে এবং টাকা জমানোর অভ্যেস নিজের মধ্যে বিকাশ করতে হবে।
নিজের চাহিদা গুলোর জন্য আগের ঠেলে প্ল্যান করুন এবং সেভাবেই সেগুলোকে কিনুন।
যদি আপনি চাকরি করছেন এবং আপনার মাইনে অনেকটা কম, তাহলে চাকরির পাশাপাশি পার্ট-টাইম ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মাথা লাগাতে হবে।
এছাড়া, যদি আপনি ব্যবসা করছেন, তাহলে একটি ব্যবসা থেকে একাধিক ব্যবসার মালিক কিভাবে হতে পারবেন সেই বিষয়ে আপনাকে ভাবতে হবে।
অধিক টাকা জমানোর বা বাঁচানোর জন্য আপনাকে অধিক টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে মন দিতে হবে।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কিভাবে টাকা জমানো যায় এবং টাকা জমানোর উপায় গুলোর বিষয়ে জানলাম।
আপনারা যদি ওপরে বলা টাকা জমানোর কৌশল বা পদ্ধতি গুলো ভালো করে ফলো করে থাকেন তাহলে অবশই ভালো পরিমানে টাকা সেভ করতে পারবেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে টাকা জমানোর সহজ উপায় যেগুলো জানতে পারলেন সেগুলো আপনাদের কাজে আসবে বলে আশা করছি।
আজকের এই আর্টিকেল, “how to save money in Bangla” যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকেল, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।