ধনী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি: আজকের দিনে কে না অর্থ যায় ? অর্থ ছাড়া আধুনিক যুগ প্রায় অচল বলাই চলে। বড়লোক হওয়ার উপায় কি ? কিভাবে বড়লোক হওয়া যায় সকলেই এই বিষয় গুলো নিয়েই ভাবেন।

অর্থই পারে সাধারণ জীবনকে অসাধারন করে তুলতে। নিজের স্বপ্ন কে সফল করে তুলতে।
তবে শুধু অর্থের চিন্তা করলেই হবে না। রোজগার করতে হবে। পুরুষ বা নারী, এই সময়ে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে সকলেরই চাই টাকা।
চাণক্য বলেছিলেন –
“উদ্যমেন হি সিদ্ধন্তি কার্যাণি ন মনোরথৈঃ
ন হি সুপ্তস্য সিংহস্য প্রবিশ্যন্তি মুখে মৃগঃ”
অর্থাৎ শুধু ইচ্ছে থাকলেই চলবে না। চাই উদ্দ্যম। কেবল ইচ্ছে শক্তি দিয়ে কোনো কাজ করা যায় না। তার সাথে প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
ঘুমন্ত সিংহের মুখে যেমন কখনোই নিজে নিজে আহার (হরিণ) চলে আসে না। সিংহ কে শিকার করে তবেই আহার পেতে হয় তেমনি সফলতা বা অর্থের জন্য পরিশ্রম দরকার।
জানলে বেশ লাগে, এই পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের সম্পত্তির সমান পরিমান মালিক মাত্র দু’হাজার জন মানুষ।
তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ভারতের বার্ষিক বাজেটের থেকেও বেশি।
অ্যামাজন কর্তা জেফ বেজোস ধনীদের তালিকার শীর্ষে আছেন। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ নাকি ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্সের চেয়ারম্যান বিশ্বের প্রথম দশজন ধনীদের তালিকায় নবম স্থানে আছেন। ২০২১ এর হিসাবে তিনি এখন ৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার মালিক।
যদিও এই পরিমান অর্থের মালিক ওনারা একদিনে হননি। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, সঠিক পদক্ষেপ, ওনাদের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছে।
ধনী হওয়ার লক্ষণ গুলোর তালিকা
এখন যদি পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগে, কিভাবে সহজে ধনী হয়ে ওঠা যায় তাহলে বলা যায় আজকের লেখাটি আপনাদের জন্যই।
লেখাটি মন দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনিও হয়তো সহজে ধনী হবার পদ্ধতিটি জেনে যাবেন।
যদিও এই পরিমান সম্পত্তি করার কথা কারোরই মাথায় আসে না। তবে লক্ষ্যটাই আসল। পরিমান নিয়ে ভেবে কি হবে।
১| স্বপ্ন দেখার অদম্য প্রচেষ্টা
প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি স্বপ্ন থাকে, ভালো ভাবে বাঁচার স্বপ্ন, জীবনটাকে উপভোগ করার স্বপ্ন, প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন।
স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিলে চলবে না। স্বপ্ন দেখতে হবে। তবে শুধু স্বপ্ন দেখে গেলেই চলবে না। তাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে হবে।
মানুষের স্বপ্ন বলে দেয় তার আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই ধনী হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ হল স্বপ্ন দেখা।
নিজেকে কিভাবে ধনী, বিত্তবান করে তোলা যায়, সেই স্বপ্ন।
নিজের সখ কিভাবে পূরণ করা যায়, সেই স্বপ্ন।
তাই স্বপ্ন দেখতে হবে সাথে সাথেই তাকে বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনাও রাখতে হবে।
২| প্রতিদিন নিজেকে অল্প অল্প করে প্রস্তুত করা
যদি আপনি সত্যি একটি ধনী ব্যক্তি হতে চান, তাহলে ধোনি হওয়ার এই লক্ষণ আপনার মধ্যে অবশই থাকা দরকার।
একদিনে সফলতা আসে না। তেমনি একদিনে ধনী হয়ে ওঠা যায় না।
ছাদে ওঠতে গেলে যেমন ধাপে ধাপে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় তেমনি ধাপে ধাপে বিত্তবান হয়ে উঠতে হয়।
রোজ নিজেকে নিজের ভবিষ্যতের জন্য অল্প অল্প করে প্রস্তুত করা দরকার।
প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে হবে, নতুন কিছু জানতে হবে। নিজের সাফল্যের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে হবে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৮৮% ধনী, বিত্তবান ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিট নিজের জন্য বরাদ্দ রাখেন।
এই সময়ে তারা, নিজেদের অনুসন্ধান করেন। নিজেদের সমালোচনা করেন। নিজের সমালোচনা সফলতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আত্মসমীক্ষা করতে হবে, কতটা সফলতার দিকে এগোনো গেল, কতটা পিছু হটতে হল সব কিছুর সমীক্ষা করতে হবে।
তাই আগামীর জন্য রোজ নিজেকে অল্প অল্প করে প্রস্তুত করতে হবে।
৩| নিজের লক্ষ্য নিয়ে ভাবা
নিজেদের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। লক্ষ্য স্থির না থাকলে, জীবনে কখনোই কোনো ভাবে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
মহাভারতে যখন গুরু দ্রোণ অর্জুন কে শিক্ষালয়ে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল, কি দেখতে পাচ্ছ, উত্তরে অর্জুন বলেছিল পাখির চোখ।
তেমনি নিজেদের লক্ষ্য কে পাখীর চোখ হিসেবে নিশ্চিত করে এগিয়ে যেতে হবে।
যদি আপনার ইচ্ছা থাকে ধনী হবার, তাহলে সেই ইচ্ছেটিকে সততার সঙ্গে সম্পূর্ণ করাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিবেকানন্দ বলতেন, যতক্ষণ না নিজের লক্ষ্য পৌছাতে পার, ততক্ষণ থেমো না।
জীবনের পথ কখনোই সরল নয়, অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। তবু নিজের লক্ষ্য স্থির থাকতে হবে।
৪| আপনি কি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি
নিজেদের ছোটো থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। দায়িত্ব না নিলে কখনোই কাজের গুরুত্ব বোঝা যায় না। দায়িত্ব মানুষকে কর্মনিপুন করে তোলে।
একজন মানুষ যদি কখনোই দায়িত্বশীল না হয় তাহলে সে কাজের গুরুত্ব বা মূল্য কোনোটিই বুঝতে পারবে না। সে সব কাজকেই লঘু হিসাবে দেখবে।
তাই ছোটো থেকে অল্প অল্প কাজের দায়িত্ব গ্রহন করা উচিত।
যদি কেউ নিজেকে ধনী বা বিত্তশালী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে তাকে ছোটো ছোটো প্রতিটি জিনিসের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রতিটি হিসাব, আয়, ব্যয়, সব ক্ষেত্রেই তাকে বুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।
এক্ষেত্রে সে যদি দায়িত্বশীল না হয়ে, ভুল করে ফেললে, তার সফলতা অনেক কমে যাবে।
তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে দায়িত্ববান হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোনো ক্ষেত্রে খরচ করলে সেটি লাভজনক আর কোনটি লাভজনক নয় তা বিচার করার বোধ থাকতে হবে।
মনে রাখবেন, বইয়ের পড়ার সঙ্গে বাস্তবের জগৎ সম্পূর্ণ আলাদা।
তাই বাস্তবের জগতের সঙ্গে না মিশলে, মানুষকে না চিনলে বুদ্ধির সামগ্রিক বিকাশ হয় না।
এই বিকাশ একমাত্র কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তবেই সম্ভব, কাজের দায়িত্ব নিলে তবেই সম্ভব।
৫| যেকোনো কাজে ঝুঁকি গ্রহণ করা
একদিনে কেউ হাঁটতে শিখে যায় না। সময় লাগে। হাঁটতে শেখার সময় বারবার পড়তে হয় আবার ওঠে দাঁড়াতে হয়। আসল হচ্ছে সাহজ।
জীবনে কিছু করার জন্য চাই সাহস। এই ক্ষমতা নিজেদের মধ্যে না আনতে পারলে কখনোই জয়ী হওয়া যায় না।
তাই অর্থ লাভের জন্য জীবনে ঝুঁকি গ্রহন করাটা দরকার।
হয়তো কখনো ব্যর্থ হতে হবে আবার দেখা গেল, ঝুঁকি না নেওয়ার জন্য জীবনে সফলতা এল না।
এক সময়ের বাংলার সবথেকে বড়ো প্রকাশনা সংস্থার মালিক, রাস্তায় রাস্তায় লক্ষীর পাঁচালি ফেরি করে ফিরতেন।
জীবনে ঝুঁকি গ্রহণ করেই তিনি বাংলার সব থেকে বড় প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন।
কিছু কিছু দিক থেকে ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষতিকর।
কিন্তু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা জীবনে ভালো কিছু করার ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে এগোনো যায় না।
৬| ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ গ্রহন করা
জীবনে চলার পথে প্রতিটা পদক্ষেপ ভেবে চিন্তে গ্রহণ করা উচিত।
প্রতিটি পদক্ষেপে জয়ী হতে পারলে তবেই জীবনে সর্বাঙ্গিক ভাবে সফল হওয়া সম্ভব।
তাই প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণের সময় কোন পদক্ষেপটি গ্রহন করা হচ্ছে এবং গ্রহণ করার পর কি হতে পারে, তা ভেবে নেওয়া প্রয়োজন।
একটা ঘটনা এ প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন, কর্কটীয় শান্তবলয়ে একবার, এক জাহাজ আটকে পড়ে, জাহাজের অধিক ওজনের জন্য জাহাজটি কিছুতেই এগোতে পারছিল না।
জাহাজে ছিল, প্রচুর দানাশষ্য এবং ঘোড়ার পাল।
এইভাবে কিছুদিন, সমুদ্রে আটকে থাকার পর, জাহাজের নাবিক কিছু ঘোড়াকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে দেয়, এবং দেখা যায় ওজন কমে যাবার জন্য জাহাজ আবার চলতে শুরু করে।
এক্ষেত্রে অনেকেই বলবে, ঘোড়াগুলোকে জলে ফেলাটা ঠিক হল ?
যদি জাহাজটি আরো বেশি দিন, আটকে থাকত, তাহলে খাদ্যসংকট দেখা দিত, ঘোড়া সহ অনেক নাবিক ও খালাসির মৃত্যু হতে পারত।
কিন্তু কিছু ঘোড়া কে জলে নিক্ষেপ করে জাহাজটি সচল হল।
তেমনি কখনো কখনো নিজেদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসবে, যখন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তখন অত্যন্ত ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে।
৭৷ ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করার ক্ষমতা
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গোলকিপার কোনো না কোনো দিন গোল খেয়েছে। আলেকজান্দারের গৌরব রথকেও থামতে হয়েছে।
সফলতা – ব্যর্থতা জীবনে লেগেই থাকবে।
তাই সফলতায় যেমন বিহ্বল হয়ে পড়া যাবেনা তেমনি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করতে হবে।
কেন ব্যর্থতা, কিভাবে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে সফল হওয়া যাবে এই পরিকল্পনা করতে হবে।
যদি কেউ ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে না পারে তাহলে সে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে একটি সত্যি ঘটনা বলে রাখা প্রয়োজন।
রতন টাটার একবার অটোমোবাইল শিল্পে বেশ লোকসান হয়েছিল।
তখন তিনি তাঁর অনুগামীদের নিয়ে ফোর্ড কম্পানির মালিকের সঙ্গে দেখা করেন কিন্তু তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করা হয়, তিনি দেশে ফিরে এসে টাটা মোটরের উন্নতির দিকে নজর দেন এবং ২০০৮ সালে ফোর্ড কম্পানির থেকে JLR মডেলের স্বত্ব কিনে নেন।
রতন টাটা নিজের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে আবার ঘুরে দাঁড়ালেন।
তেমনি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
৮৷ দৃঢ় মানসিকতা
জীবনে উন্নতির জন্য চাই দৃঢ় মানসিকতা। মানসিক ইচ্ছা থাকলে কেউ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না।
বুদ্ধি শক্তির থেকেও ক্ষমতাবান মানসিক শক্তি।
মানসিক শক্তি দিয়ে সব কিছু জয় করে নেওয়া সম্ভব।
তাই নিজেদের মানসিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
৯৷ মেধা
যেকোনো কাজে মানসিক শক্তির সঙ্গেও দরকার মেধার।
মেধা না থাকলে কোনো কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় না।
মেধা বা বুদ্ধি না থাকলে কখনোই জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
শুধু কাজ করলেই চলবে না। কোনটি দ্রুত উন্নতি করবে আর কোনটি সময় বহুল, তা বোঝার জন্য মেধার একান্ত প্রয়োজন।
বুদ্ধির জোরেই একমাত্র মানুষ বাকি যেকোনো প্রাণীর থেকে এগিয়ে গিয়েছে।
তাই ধনী বা বিত্তবান হবার জন্য মেধা একান্ত প্রয়োজন।
আমাদের শেষ কথা,,
পরিশ্রমী মনোভাব, সততা, প্রতাশাকে জয় করার ক্ষমতা, নিজেদের খুব সহজেই সফলতার লক্ষ্যে পৌছে দেয়। তাই, যদি আপনিও বড়লোক হওয়ার উপায় বা কিভাবে বড়লোক হওয়া যায় এই বিষয়ে ভাবছেন, তাহলে নিজেদের মধ্যে ওপরে বলা ধনী হওয়ার লক্ষণ গুলোর বিকাশ করতেই হবে।
এমনিতে যদি আপনার মধ্যে এই লক্ষণ গুলো আগের থেকেই রয়েছে, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই।
আশা করব, লেখাটি পাঠকের প্রতাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
আপনিও উপরের প্রতিটি বিষয়কে যথাযথ ভাবে অনুসরণ করে নিজেদের জীবনে আর্থিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবেন।