সঠিক ভাবে পড়াশোনা করার নিয়ম । কিভাবে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া যায়

আজ আমরা একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। বিষয়টি হলো আমরা পড়াশুনা কিভাবে মন দিয়ে করতে পারি, পড়াশোনা করার নিয়ম গুলো কি, কিভাবে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া যায়, লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় এবং পড়াশোনা মনে রাখার উপায়

পড়াশোনা করার নিয়ম
How to study with full concentration and focus ?

ছাত্র ছাত্রীদের মনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো পড়াশুনায় কি করে মন লাগানো যায় ? বা, লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় গুলো কি ?

দেখুন যদি আপনারা মন দিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছেন, তাহলে পড়াশুনার সঠিক নিয়ম গুলো আপনাদের জানতে হবে।

পড়াশুনা শুরু করার আগে ছাত্র ছাত্রীদের মনে এটা বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারবো এবং মনে এটাই মেনে চলতে হবে যে পড়াশুনা ছাড়া কিছু নেই।

তাই আমরা যত বড়ো উদ্দেশ্য রাখিনা কেন জীবনে সেটা পুরো করতে হলে আমাদের পড়াশুনা ভালো করে করতেই হবে এই বিশ্বাস নিয়েই পড়াশোনা শুরু করতে হবে এবং, পড়াশুনর দ্বারাই সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

তাই এটা মেনে চলতে পারলে মনে সকরাত্মক ভাব জেগে উঠবে এবং পড়ার আগ্রহ বাড়বে।

যদি পড়া নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মনে কোনো সকরাত্মক ভাব না থাকে তাহলে বেশিক্ষণ মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করা যাবেনা ফলে ছাত্র ছাত্রীদের মনে হতাশা জন্ম নিবে এবং পড়াতে মন বসবেনা।

তাই পড়াশুনা করার ক্ষেত্রে সকরাত্মক ভাব খুবই জরুরি।

চলুন এখন আমরা নিচে বিস্তারিত ভাবে কিছু জরুরি উপায় গুলোর বিষয়ে জেনেনেই যেগুলোর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা (students) লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। 

পড়াশোনা করার নিয়ম । লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়

চলুন, এবার আমরা সরাসরি এমন কিছু কার্যকর উপায় এবং নিয়ম গুলোর বিষয়ে জেনেনেই যেগুলোর মেনে লেখাপড়া করলে লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষেত্রে প্রচুর লাভ পাবেন। 

১. মনোযোগ দিয়ে পড়তে বসার কিছু ছোটো ছোটো নিয়ম

পড়তে বসার সময়  আমাদের কিছু ছোটো ছোটো কথায় অবশই ধ্যান রাখতে হবে।

এগুলো অনেক সামান্য কথা হলেও পড়াশুনা মনোযোগ দিয়ে করার জন্য এগুলো মেনে চললে আমরা সুন্দরভাবে মন দিয়ে পড়তে পারবো।

যেমন বিছানায় পড়তে না বসে পড়ার টেবিলে বসা, পড়ার জিনিস পত্র বই, পেন্সিল, পেন, খাতা ইত্যাদি জিনিসগুলো একেবারে নিয়ে সাথে বসা যাতে পড়ার সময় বার বার পড়ার জায়গা ছেড়ে উঠতে না হয়।

পড়ার জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখাটা অনেক জরুরি, আপনি যেই জায়গাতে পড়তে বসেছেন সেখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকাটা অনেকটাই জরুরি। 

তাই মনোযোগ দিয়ে অধিক সময় পড়তে হলে এই ছোটো ছোটো নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে। 

২. পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত করা

ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশুনা করার জন্য আগে একটি নির্দিষ্ট  সময় (time table) রুটিন করে নিলে পড়তে অনেকটা সুবিধা হয়ে থাকে।

কারণ এতে কখন কি বিষয় পড়তে হবে সেটা আগের থেকেই জানা থাকে।

রুটিন বানানো না থাকলে বা টাইম টেবিল ঠিক না থাকলে সব বই একসাথে নিয়ে বসলে ছাত্র ছাত্রীরা বিভ্রান্ত (confuse) হয়ে যায় কখন কি পড়তে হবে।

তাই পড়ার রুটিনে কোনদিন কোন বিষয় পড়তে হবে কতক্ষন সময় পড়তে হবে সঠিক ভাবে জানা থাকলে তখন পড়তেও মনোযোগ আসে এবং যেটা পড়বেন সেটা মনেও থাকবে।

তাই পড়াশুনা মন দিয়ে করতে হলে টাইম টেবিল ও রুটিন বানানো খুবি জরুরি।   

৩. পড়ার জন্য একটি শান্ত এবং সঠিক জায়গা ঠিক করা

 ছাত্র ছাত্রীরা পড়ার জন্য সব সময় শান্ত এবং পরিষ্কার পরিছন্ন জায়গা ঠিক করতে হবে কারণ মন দিয়ে পড়ার জন্য জায়গা সঠিক হওয়াটা একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

পড়ার জায়গা বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা যাতে না হয়।

যদি পড়ার জায়গা শান্ত পরিবেশ না হয়ে হাল্লা চিৎকার টিভি ইত্যাদি চালানো থাকে তাহলে যতই মন দিয়ে পরক না কেন পড়া শিখা হবে না বা মনে রাখতে প্রচুর সমস্যা হয়ে থাকবে।

তাই মন দিয়ে পড়ার জন্য জায়গা শান্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া বিশেষ দরকার।

পরিষ্কারের কথা এজন্যই বলা হয়েছে কারণ পরিষ্কার পরিবেশে আমাদের মনো ভালো লাগবে এবং ওই জায়গায় বসতে এবং পড়াতেও মন বসবে তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য সঠিক জায়গা খুবই জরুরি। 

৪. পড়ার সময় অন্য জিনিসে ধ্যান না দেওয়া

আজকাল বড় হোক বা বাচ্চা হোক মোবাইল ফোন সকলে অধিক ব্যবহার করে থাকে।

স্মার্ট ফোনে গেমস খেলা, ওয়াটসাপ, ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ইত্যাদিতে চেটিং করার ফলে এখন ছাত্র ছাত্রীরা দিনের বেশিরভাগ সময় এগুলোতেই সময় নষ্ট করে দেয়। এর ফলে, পড়ালেখার প্রচুর ক্ষতি অবশই হয়ে থাকে।

তাই পড়তে বসার সময় ছাত্র ছাত্রীদের মনে রাখতে হবে যে ভালো করে অধিক সময় পড়তে চাইলে এই কয়টি জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

উদাহরণ স্বরূপ পড়ার টেবিলে যদি ফোন রাখা থাকে তাহলে মেসেজ বা কিছু নোটিফিকেশন আসলেই পড়া ছেড়ে ওটা দেখার মন হবে, তখন পড়া থেকে ধ্যান সরে যাবে।

তাই পড়ার সময় এগুলো জিনিস টেবিলে রাখা ঠিক না। 

৫. মেডিটেশন (Meditation) দ্বারা পড়াতে মনোযোগ আনা

আমরা শারীরিক ভাবে যতই ঠিক থাকিনা কেন পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা অনেক জরুরি আর এটা একমাত্র সম্ভব (Meditation) ধ্যানের দ্বারা।

আজকাল সকলের জীবন অনেক বেশি চাপযুক্ত, তাই মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য (meditation) ধ্যান অনেক সাহায্য করে থাকে।

তাই, ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করার জন্য আগে কিছু সময় ধ্যান শুরু করা উচিত।

ধ্যান করার অনেক রকম পদ্ধতি আছে কিন্তু ছাত্র ছাত্রীরা কিছু সহজ পদ্ধতিতে চর্চ্চা শুরু করতে পারে।

যেমন, 

কোনো একটা জায়গায় শান্তভাবে বসে নিজের শাষ প্রশাসের উপর নিয়ন্ত্রণ করা বা কোনো শান্ত সংগীত শুনে ধ্যান একত্রিত করা ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির দ্বারা মনোযোগ আনা যায়।

মনে রাখবেন, ধ্যান করার সময় বাইরের কোনো বিচার যাতে মাথায় না আসে এদিকে ধ্যান রাখতে হবে।

এভাবে, পড়ার সঠিক রুটিনের সাথে নিয়মিত ভাবে পড়া শুরু করার আগে কিছুক্ষন মেডিটেশন করতে পারলে সহজেই পড়ায় মন বসানো যাবে। 

৬. পড়ার মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া দরকার

আমরা যেকোনো কাজ যদি লাগাতার বিশ্রাম না নিয়ে করতেই থাকি এটাও কিন্তু অব্যশই খারাপ।

তাই পড়তে বসলেও এক ঘন্টার পর অন্তত ১০ মিনিটের বিরতি নেওয়া দরকার।

কারণ তখন আমাদের মস্তিষ্কটির আরাম হয় এবং দ্বিতীয়বার পড়তে বসার সময় আমাদের মস্তিষ্কটি সতেজ হয়ে উঠে এবং এভাবে তখন নতুন করে পড়তে উৎসাহ জাগে।

তাই অধিক সময় ধরে পড়ার পর কিছু সময় বিশ্রাম নিন বা কিছুক্ষন হেটে আসুন। 

বিশ্বাস করুন এতে আপনি অনেক বেশি সময় মন দিয়ে পড়তে থাকতে পারবেন।

৭. সব সময় নোটস (notes) বানিয়ে পড়া

মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অব্যশই প্রত্যেকটি বিষয়ের নোটস বানিয়ে নিতে হবে। 

নোটস বানানো থাকলে পড়া শিখতে এবং বুঝতে সুবিধা হয়ে থাকে এবং মুখস্থ করা পড়া সহজেই মনে থাকে।

এতে পরীক্ষার সময় পুনর্বিবেচনা (revision) করতেও অনেক সুবিধা হয়ে থাকে।

কারণ পরীক্ষার সময় আমরা অল্প সময়ে অনেক বিষয় পড়তে হয় তাই নোটস বানানো থাকলে আমাদের বই থেকে উত্তর বের করে পড়তে হয়না এবং ওই বেঁচে যাওয়া সময়টুকু revision দেওয়া যায়। 

নোটস বানিয়ে পড়লে নম্বর হিসাবে প্রশ্নের উত্তর কত বড়ো বা ছোটো হবে পরীক্ষার আগে সেটার ধারণা (idea) আপনার হয়ে যাবে। 

৮. পুরানো প্রশ্নের সমাধান করা

পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো পুরানো প্রশ্নের সমাধান করা। 

যদি গত ৩ বা ৫ বছরের পুরানো প্রশ্ন গুলো পরীক্ষার সময়সূচি হিসাবে সমাধান করতে পারা যায়, তখন পরীক্ষার সময় অধিক চিন্তা হয়না এবং উত্তর কোনখান থেকে শুরু হবে এবং কোনখানে শেষ করতে হবে, কোন প্রশ্নের উত্তর আগে লিখতে হবে কোনটা পরে লিখবেন সেবিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান হয়ে যাবে। 

পরীক্ষার সময় প্রশ্ন হাথে আসলেই কিছু কিছু ছাত্র ছাত্রীরা বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং কোন প্রশ্নের উত্তর আগে লিখতে হবে সেটা বুঝতে পারেননা।

তাই, পুরানো প্রশ্নের সমাধানের ফলে এই সমস্যা গুলো আপনার থাকবেনা এবং পরীক্ষার সময় কিরকম ধরণের প্রশ্ন আসতে পারে সেটার আইডিয়া আপনার থাকবে। 

৯. ভালো ঘুম অনেক জরুরি

মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ভালো ঘুম খুবই দরকার কারণ ভালো করে ঘুম না হলে আমরা যতই জোর দিয়ে পড়িনা কেন আমাদের সারাদিন অলস এবং দুর্বল অনুভব হবে।

রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার।

ঘুম ভালো হলেই আমাদের মস্তিষ্ক ভালো এবং সতেজ (fresh) থাকবে।

এর কারণ আমরা যখন রাতে ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক শিথিল হয় এর ফলে মস্তিষ্ক মজবুত হয়ে উঠে এবং শরীরকেও আরাম দেয় যার ফলে পড়ার আগ্রহ বাড়ে এবং সবকিছু মনে রাখতে সাহায্য করে। 

তাই ভালো ঘুম পড়ার ক্ষেত্রে অনেক জরুরি। 

১০. পড়াশোনা মনে রাখার উপায়

যদি আপনার পড়া মনে থাকেনা তাহলে আপনি বিশেষ করে রাতের ভাগে বা ভোরের সময়ে পড়ার অভ্যেস করুন।

দিনের ভাগে অনেকের পড়ায় মন বসতে অসুবিধে হয়ে থাকে এবং যেটা পড়েন সেটা মনে থাকেনা।

তবে, অনেক বাচ্চারা যখন ভোরের সময়ে, প্রায় ৫ টা বা ৬ টা থেকে পড়তে বসেন তখন কিন্তু দারুন মনোযোগ দিয়ে তারা পড়াশোনা করেন।

এছাড়া, ভোরের সময়ে অনেক তাড়াতাড়ি পড়া মনে হয়ে যায় এবং সেটা অনেক সময় মনে থেকে যায়।

তাই, পড়া মনে রাখতে যদি সমস্যা হচ্ছে, তাহলে অবশই ভোরবেলা পড়ার চেষ্টা করুন।

 

সারাংশ (Conclusion )

তাহলে আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পড়াশোনা করার নিয়ম, পড়াশোনা মনে রাখার উপায়, কিভাবে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া যায়,

পড়ায় মন বসানোর মন্ত্র  ইত্যাদি এই বিভিন্ন বিষয়ে জানেন নিলাম। 

কি কি পদ্ধতি ব্যবহার করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করা যায় সেবিষয়ে আমরা আজকে শিখতে পারলাম। 

দেখুন, লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার উপায় এমনিতে প্রচুর রয়েছে এবং প্রত্যেকেই এই উপায় গুলো মেনে চললে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। 

তবে, সর্বপ্রথমে আপনাকে নিজের মনে লেখাপড়ার লাভ এবং প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিচার গুলো রাখতে হবে।

আশা করি আমার এই আর্টিকেল দ্বারা আপনাদের অল্প হলেও সাহায্য হবে। 

 

About The Author

3 thoughts on “সঠিক ভাবে পড়াশোনা করার নিয়ম । কিভাবে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া যায়”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top