পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী কোনটি বা কোনগুলো ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা বিশ্বের দীর্ঘতম নদী গুলোর নাম ও তালিকা জানতে পারবেন।

আমাদের এই পৃথিবীর প্রকৃতি সুন্দর ও অজানা রহস্যে আবৃত। আর, এই আশ্চর্যময় প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি হল এর নদ-নদী।
বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জলের বেশিরভাগ জল লবনাক্ত হলেও, নদীগুলো কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই স্বাদু জলের উৎস হয়ে থাকে।
আর, ইতিহাস সাক্ষী আছে যে, পৃথিবীর প্রথমদিকার সফল মানব সভ্যতাগুলো কিন্তু নদীমাতৃক; অর্থাৎ নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।
ভূগোল বিদ্যা বলে যে, নদ বা নদী হল এক ধরণের প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত জলধারা ও সাধারণত স্বাদু জলের উৎস।
এই জলধারা মূলত মহাসাগর, সমুদ্র, হ্রদ বা অন্য কোনো নদী বা জলের উৎস থেকে সৃষ্টি ও প্রবাহিত হয়ে থাকে।
আসলে, এই নদী হল একটি হাইড্রোলজিক্যাল সাইকেল বা জলবিদ্যা চক্রের একটি অংশ।
যেকোনো নদীর জলপ্রবাহের প্রধান কারণ নিয়মানুযায়ী জল সংগ্রহ করে প্রবাহিত হতে থাকা।
আর, মূলত ভূগর্ভস্থ জলের উৎস, প্রস্রবণ, প্রাকৃতিক বরফ কিংবা হিমবাহের গলা জল, প্রাকৃতিকভাবে সঞ্চিত জলের হঠাৎ মুক্তি এবং ভূপৃষ্ঠের একটি অববাহিকাতে সঞ্চিত বৃষ্টিপাতের ধারার মাধ্যমেও কোনো নদী জল সংগ্রহ করে থাকে।
পৃথিবীর মানচিত্র খুবই বৈচিত্রপূর্ণ ও এর মহাদেশ ও মহাসাগরের ব্যাপ্তি ও প্রকৃতি বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন রকম।
আর, এই প্রকৃতিগত বৈচিত্র্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের নদ-নদীর ধারা, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, প্রকৃতি, ও গতিপথের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলেছে।
যার ফলে, এরা প্রায় প্রত্যেকেই স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
আর, আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি, দৈর্ঘ অনুযায়ী বিশ্বের দীর্ঘতম নদীর তালিকার ব্যাপারে।
এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জন্যে উপস্থিত করছি – বিশ্বের সেরা দীর্ঘতম ৭টি নদীর তালিকাটি –
পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীর নাম কি ?
আপনি যদি জানতে চান যে, পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘতম নদীর নাম কি – তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সেটা হল নীল নদ।
তবে, নদীর দীর্ঘতা প্রধানত দুটো উপাদানের উপর সরাসরি নির্ভর করে; যথা –
- নদীর উৎপত্তিস্থল (উৎস বা কেন্দ্রবিন্দু – (যেখান থেকে নদীর উৎপত্তি হয়েছে).
- নদীর মুখ (যে বিন্দুতে নদী মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্র/সাগর/মোহনার অভিমুখে রওনা হয়েছে).
পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী কোনগুলো ?
চলুন, তাহলে ওপরে বলা দুটি শর্তের উপর নির্ভর করে, দেখা যাক, পৃথিবীর প্রথম ৭টি দীর্ঘতম নদ বা নদী কোনগুলো ?
১. নীল নদ- ৬,৬৫০ কি.মি.
নীল নদকে পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ বলে মনে করা হয়ে থাকে।
পুষ্টিকর কৃষি মাটি প্রদান থেকে শুরু করে পরিবহনের মুখ্য পথ হিসাবে – নীল নদ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
এটিকে আফ্রিকান নদীর জনক হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।
ভিক্টোরিয়া লেককে এই নদের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর নীল ও সাদা নদের দুটি উপনদী রয়েছে।
মূলত, নীল নদের বহু সংখ্যক ছোট-বড় উপনদী রয়েছে; যে কারণে এই নদ বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পেরেছে।
এই নদ তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা, ইজিপ্ট, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, কেনিয়া, কঙ্গো যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ সুদান, সুদান, ইরিত্রিয়া, ও বুরুন্ডির মতো দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
২. আমাজন নদী – ৬,৪০০ কি.মি.
নীল নদ ও আমাজনের মতো বড় নদীগুলোর প্রকৃত উৎস খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।
এই নদীগুলোর অসংখ্য বড় ও ছোট উপনদী ও শাখানদীও আছে।
সেই কারণে, এদের উৎসপথ চট করে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।
অন্যদিকে, নদীগুলোর প্রকৃত দৈর্ঘ্য জানতে গেলে, এদের সবচেয়ে দূরবর্তী উত্স খোঁজা একান্তই আবশ্যক।
আর, মূলত এই উৎসগুলো প্রায়শই প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে থাকায় এদের সনাক্তকরণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
জল নিঃসরণের দিক থেকে, কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই আমাজন হল পৃথিবীর বৃহত্তম নদী।
কিন্তু, দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে এটি হল বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী।
আমাজন, দক্ষিণ আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ নদী হিসেবে পরিচিত।
এর ব্যাপক প্রবাহের আয়তন ও এর অববাহিকার ক্ষেত্রফলের দিক থেকে – এটি পৃথিবীর বৃহত্তম নিষ্কাশন ব্যবস্থার অধিকারী।
আমাজানের প্রকৃত উৎসের সন্ধান নিশ্চিতভাবে পাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি।
তবে, ২০১৪ সালের একটা অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে যে, এর সম্ভাব্য উৎস হতে পারে কর্ডিয়েরা রুমি ত্রুজ।
এটি পেরু, কোলাম্বিয়া ও ব্রাজিল দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
৩. ইয়াংজি নদী- ৬,৩০০ কি.মি.
এশিয়া মহাদেশ তথা বিশ্বের তৃতীয়-বৃহত্তম নদী হল চীনের ইয়াংজি নদী।
এই নদী একটি দেশের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে প্রবাহিত হওয়া দীর্ঘতম নদী হিসেবেও অভিহিত হয়।
থুওথুও হল এই নদীর প্রধান উপনদী যা, তাঙ্গুলা পর্বতশ্রেণী থেকে তৈরী হয়েছে।
আর, এই থুওথুও-কেই ইয়াংজি নদীর মূল উৎস বলে ধরা হয়।
তবে, থুওথুও উপনদীকে এর প্রধান উৎস ধরা হলেও, বর্তমানের একটি অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে যে, এই নদীর মুখ্য উৎস জারি পাহাড়ে অবস্থিত; যেখান থেকে ড্যাম কু উপনদীরও সৃষ্টি হয়েছে।
আর, এই উপনদীগুলো একত্রিত হয়েই ইয়াংজি নদীর সৃষ্টি করেছে, যা অবশেষে সাংহাইতে পূর্ব চীন সাগরের সাথে মিলিত হয়েছে।
এই নদীর অববাহিকাতাই চীনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনবসতি গড়ে উঠেছে।
৪. মিসিসিপি-মিসৌরি নদী- ৬,২৭৪ কি.মি.
জেফারসন, মিসৌরি ও মিসিসিপি নদীগুলোর সম্মিলিত ধারাই তৈরী করেছে- বিশ্বের এই চতুর্থ দীর্ঘতম নদীটিকে।
মধ্য-দক্ষিণ আমেরিকার এই নদীর অববাহিকা হল বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম অববাহিকা।
এই নদীটি কানাডার ২টি প্রদেশ ও যুক্তরাষ্টের ৩১ টি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
উত্তর মিনেসোটার লেক ইটাস্কা থেকেই মিসিসিপি-মিসৌরি নদীর উৎপত্তি হয়েছে বলে ধরা হয়।
পরবর্তীতে, এই নদী মেক্সিকো উপসাগরে পতিত হয়েছে।
৫. পারানা নদী- ৪৮৮০ কি.মি.
পারানা নদী পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘতম নদী।
এটি দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত ও এটি এই মহাদেশেরই দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী হিসেবে পরিচিত।
পারানা নদীটি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই নদীর ব-দ্বীপ পৃথিবীর মধ্যে একটিই রয়েছে, যেটা অন্য নদীতে খালি হয়ে যায়, এই ক্ষেত্রে, এই নদীর বদ্বীপ রিও দে লা প্লাতার মোহনায় মিলিত হয়।
এছাড়াও, পৃথিবীর আর অন্য কোনো নদীই স্বাদু জলে ব-দ্বীপ গঠন করেনি।
এই নদীর নামটির উৎপত্তি হয়েছে ওখানকার স্থানীয় ভাষা “পারা রেহে ওনাভা”-এর থেকে।
যার অর্থ হল সমুদ্রের মতো বড়।
৬. দ্য ইয়েলো রিভার- ৫,৪৬৪ কি.মি.
পৃথিবীর এই ষষ্ঠ দীর্ঘতম নদী দ্য ইয়েলো রিভারের, এরকম নামকরণ করার পিছনে রয়েছে- এর বাদামী-হলুদ রঙ।
চীনের মধ্যে প্রবাহিত এই নদীর আঞ্চলিক নাম হল হোয়াং-হো।
এই নদীর জলে প্রচুর পরিমাণে আলগা হলুদ রঙের পলি ভেসে বেড়ায়।
যার জন্যে এই নদীর জল হলুদ-বাদামী বর্ণ ধারণ করে।
আর, এই নদীতে বন্যা এলে, তার আশেপাশের মাটিতেও এর হলুদ অবশিষ্টাংশ রয়ে যায়।
এই হোয়াং-হোর অববাহিকাকেই প্রাচীন চীন সভ্যতার জন্মস্থান বলে মনে করা হয়।
চীন দেশের কাছে এই নদী খুবই পবিত্র ও মাতৃ নদীর তর্জমা পায়।
৭. অব ইরিটিশ নদী- ৪,২৪৮ কি.মি.
রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি বর্তমানে পৃথিবীর সপ্তমতম দীর্ঘতম নদী।
আলতাই পর্বতমালার গলিত হিমবাহ থেকে ইরিটিশ প্রস্রবণ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
আর, এই পর্বতশ্রেণীই পশ্চিম মঙ্গোলিয়া ও চীনের জিনজিয়াংয়ের মধ্যে প্রাকৃতিক সীমানা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
অব নামে বহুল পরিচিত এই নদীটি উত্তর মহাসাগরে গিয়ে মিশেছে।
মূলত, এই নদী হল তিনটি মুখ্য সাইবেরীয় নদীর মিলিত ধারা।
ওব নদীটি বিয়া ও কাতুন নামক দুটি নদীর সঙ্গমস্থলে গঠিত হয়েছে।
আর, এটি রাশিয়া, চীন ও কাজাখস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
আমাদের শেষ কথা,,
পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী কোনটি নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক গুলোতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেটা কমেন্টের মাধ্যমে কিন্তু অবশই জানাবেন।