বই পড়ার উপকারিতা, গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা গুলো

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা, বই পড়ার গুরুত্ব এবং বই পড়ার উপকারিতা গুলো নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে চলেছি। 

বই পড়ার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা
Benefits of reading books in Bengali.

এক সময় ছিল যখন মানুষ সময় কাটানোর জন্য বই পড়তে ভালোবাসতেন এবং যারা খুব বেশি বই পড়তে পছন্দ করতেন তারা বই কেই নিজের বন্ধু বলে মনে করতেন। 

কিন্তু যত সময় এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ টেকনোলজির উপর নিজেকে এতটাই নির্ভর করে ফেলেছেন যে আজ সময় গুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অনলাইনে ভিডিও দেখে কাটিয়ে দিচ্ছেন। 

আমি বলছিনা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা বা অনলাইনে ভিডিও দেখা খারাপ বা সোশ্যাল মিডিয়াতে চ্যাটিং করাটা খারাপ, তবে সেই সময় গুলো যদি বই পড়ে কাটানো যায়, তাহলে তার গুরুত্ব অনেকটা বেশি থাকবে।

যেমন, প্রতিদিন রাতে যদি ঘুমানোর আগে আধা ঘন্টা হলেও কোনো ভালো বই পড়া যায় তাহলে রাতে ঘুম ভালো হয়ে থাকে। এর ফলে পরের দিনটিও আমাদের ভালো কাটে।

তাই আমাদের সকলেরই  কিছু সময় হলেও বই পড়ার অভ্যাসটি প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে রাখা দরকার।

পৃথিবীতে যত সফল ব্যক্তিরা আছেন তাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাসটি আছে বলেই তারা জীবনে সফল হতে পেরেছেন।

কারণ আপনি যতো বই পড়বেন আপনার জ্ঞান ততটাই বাড়বে।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো বই পড়ার উপকারীতা এবং গুরুত্ব গুলো কি কি।

তাহলে চলুন আমরা নিচে প্রত্যেকটি বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই।

বই পড়ার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, এবং উপকারিতা

এমনিতে বই পড়ার অনেক লাভ রয়েছে কিন্তু আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বই পড়ার  ৯ টি বিশেষ উপকারিতার বা লাভ নিয়ে আলোচনা করবো।

১. একাগ্রতা বাড়ে

আমরা যখন কোনো একটি কাজ খুব মন দিয়ে করি তখন আমাদের পুরো ধ্যান সেই কাজটির উপরেই টিকে থাকে।

কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমরা অনেক চেষ্টা করলেও সেই কাজটিতে মন লাগাতে পারিনা। এর কারণ আমাদের মধ্যে একাগ্রতার কমি থাকা। 

তাই আমরা যখন কোনো বিষয়ের বই পড়ে থাকি যেমন কোনো মহান ব্যক্তির জীবনী বা জীবনে সফল হওয়ার উপায় ইত্যাদি, তখন বই পড়ার সময় আমাদের  পুরো ধ্যান বইয়ের প্রত্যেকটি শব্দের এবং বাক্যের উপর থেকে থাকে।

এর ফলে ধীরে ধীরে আমাদের একাগ্রতা প্রচুর পরিমানে বাড়তে শুরু করে। 

আর, একাগ্রতা বাড়লে আমারা যেকোনো কাজ অনেক ধ্যান দিয়ে করতে পারি এবং আমাদের কার্য্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

তাহলে, একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রতিদিন বই পড়া অবশই দরকার।

২. জ্ঞান বাড়ে

প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস আমাদের জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।

এর ফলে আমরা অনেক অজানা তথ্যের বিষয়ে জানতে পারি যেগুলোর বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণাই থাকেনা।

বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারি এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার ফলে আমাদের মাথায় নতুন, উন্নত এবং ভালো ভালো চিন্তাধারা জন্মায়।

ভালো এবং সকারত্মক চিন্তাধারার আমাদের কর্মজীবনে উন্নতি সাধন করতে সাহায্য করে থাকবে।

তাই কর্মজীবনে সফল হতে চাইলে সফল ব্যক্তিদের জীবনী বা তাদের সাথে জড়িত বিভিন্ন বই পড়া দরকার।

বই পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার ফলে আমাদের জীবন ধারণের যেই পুরানো ধারণা ছিল সেটি বদলে যায় এবং জীবনে যেকোনো সিদ্ধান্ত অনেক বিবেক বিবেচনার সাথে নেওয়া যায়।

তাই নিজের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য এবং নিজেকে উন্নত করে তুলতে প্রতিদিন বই পড়া দরকার।

৩. কল্পনাশক্তি বাড়ে

বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

কারণ আমরা যখন কোনো একটি বিষয়ে কাহিনী পরে থাকি তখন সেই কাহিনীটি শেষ জানা অব্দি আমাদের মধ্যে অনেক কৌতূহল জন্মায়।

কাহিনীর শেষ কি হবে এবং বই পড়ার মাঝে মাঝে নিজেদের মনে অনেক রকম কল্পনা করা, বই এর চরিত্র গুলোকে অনুভব করা এবং নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে কল্পনা করা, এগুলোই বই পড়ার সময় আমাদের মনে এসে থাকে। 

কিন্তু যেকোনো কাহিনী পড়ে আমরা যেটা কল্পনা করে থাকি কাহিনীর শেষে দেখা যায় এর সমাপ্তি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে।

তখন আমাদের মনে বিচার চলে আসে যে, “এই কাহিনীটির অন্ত এভাবেও হতে পারে”।

এই ধরণের বিচার আমাদের কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।

এছাড়াও আমরা যখন কোনো বিষয়ের বই পড়ি তখন সেখানে লিখা কাহিনীর সাথে আমাদের জীবনের কল্পনা করে থাকি এবং সেই কাহিনীর সাথে নিজেদের জীবনের তুলনা করে অনেক রকম কল্পনা করে থাকি।

এর ফলে আমাদের চিন্তা করার এবং বিচার করার কল্পনাশক্তি বাড়ে।

৪. ভালো ঘুম আসে

রাতে যদি ঘুমানোর আগে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা বই পড়া যায় তাহলে ভালো ঘুম আসতে সাহায্য করে থাকে।

কারণ আমাদের ব্যস্ততা ভরা জীবনে অনেক বেশি চাপ থাকে যার জন্যে ঘুম ঠিক ভাবে হয়না, এবং ঘুম ভালো করে না হলে এই চাপ অনেক ধরণের বেমার সৃষ্টি করে থাকে।

তাই আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ঘুম খুবই জরুরি।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে বই পড়লে  নানান ধরণের বিচার থেকে ধ্যান সরে আমাদের পুরো ধ্যান বইয়ের উপর থাকে এবং মস্তিস্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে ফলে আমাদের চোখ ভারী হয়ে ঘুম চলে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, রাতে ঘুমানোর সময় যদি পসিটিভ কিছু পড়া যায় তাহলে পরের দিনটিও পসিটিভ চিন্তাধারার সাথে শুরু করা সম্ভব।

কারণ সারারাত আমাদের সাবকন্সিয়াস মাইন্ডে সেই পসিটিভ বিচার গুলো থাকে। তাই রাতে ভালো ঘুম আসার ক্ষেত্রে ভালো ভালো বই পড়া খুবই সাহায্যকর।

৫. একাকীত্ব দূর করে

বইকেই আমাদের প্রকৃত বন্ধু বা সাথী বলা যায়, কারণ বই একমাত্র বন্ধু যা কোনোরকম স্বার্থ ছাড়া আমাদের মন ভালো করে দিতে সাহায্য করে থাকে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের সাহায্য নিয়ে আমরা নিজের একাকীত্ব দূর করতে চেষ্টা করে থাকি যদিও এর অধিক ব্যবহার আমাদের একাকীত্ব আরো বাড়িয়ে তোলে।

তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই স্মার্ট ফোনে অধিক সময় না কাটিয়ে বই পড়াতে সময় দেওয়া দরকার।

যখনি একা লাগে বা কথা বলার জন্য কেউ পাশে থাকেনা, তখন আমাদের নিজের পছন্দের কোনো বই পড়া দরকার।

এর ফলে কিছু সময় হলেও মাথা থেকে একাকীত্ব ভাব দূর হয়ে আমাদের মুড পরিবর্তন হয়ে যায় এবং মস্তিস্ক শিথিল করে থাকে।

তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই একাকীত্ব দূর করার জন্য প্রতিদিন বই পড়া দরকার।

৬. মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে

বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে।

আমরা যখন কোনো বই পরে থাকি সেখানে লিখা কাহিনী বা চরিত্রের বিষয়ে আমরা অনেক মনোযোগ দিয়ে পরি। আর সেই কাহানি বা চরিত্র আমাদের অনেকদিন পর্যন্ত মনে থেকে যায়।

তাই প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ে বই পড়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন তথ্য পেতে থাকে ফলে আমাদের মনে রাখার এবং মনে করার ক্ষমতা দিন দিন বাড়াতে শুরু করে। 

এই অভ্যাসটি আমাদের মস্তিষ্ককে আরো অধিক সক্রিয় এবং কার্য্যকর করে তুলতে সাহায্য করে থাকে।

ফলে যেকোনো জিনিষ মনে রাখাটা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে পড়ে।

৭. সকরাত্মকভাব বিকাশ হয়

বর্তমান সময়ের স্ট্রেশফুল জীবনে বিভিন্ন ধরণের চাপের ফলে আমাদের মনে অনেক রকম নকরাত্মক বিচার জন্মায়।

কেও পড়াশুনা নিয়ে চাপে থাকে, কেও চাকরি নিয়ে চাপে থাকে এছাড়া অনেক সময় যখন কাজ গুলো সঠিক ভাবে হয় না তখন আমাদের মনে বিভিন্ন ধরণের নকরাত্মক (negative) বিচার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

কিন্তু আমরা যদি সফল ব্যক্তিদের জীবন সংগ্রামের বই গুলো পরে থাকি তখন আমাদের মনে সকরাত্মক ভাব বিকাশ পেয়ে থাকে এবং আমরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি।

এই সকরাত্মক ভাবই আমাদের যেকোনো পরিস্থিতির সমস্যা সহজভাবে সমাধান করতে সাহায্য করে থাকে।

জীবনে চলার জন্য সকরাত্মক ভাব থাকা খুবই জরুরি আর তাই এর জন্য ভালো ভালো অনুপ্রাণিত বই পড়া অনেকটাই দরকার।

৮. লক্ষ্য পূরণে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

আমাদের জীবনে সকলেরই ছোটো বড়ো কোননা কোনো লক্ষ্য অবশই থাকে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রচুর দরকার পড়ে থাকে। 

আর লক্ষ্য পূরণ করতে বইয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, কারণ বই আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।

আমরা যত সফল ব্যক্তিদের জীবনী ইত্যাদি পড়বো তখন আমাদের মনে লক্ষ্যের বিষয়ে ততবেশি জ্ঞান বাড়বে, এর ফলে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করার আত্মবিশ্বাস আরো বেশি দৃঢ় হয়ে পরবে।

অনেক সময় দেখা যায়, লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের পথে অনেক বাধা এসে থাকে।

কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস সেই বাধা গুলো অতিক্রম করার সাহস দিয়ে থাকে এবং নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।

তাই লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে মনে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্য ভালো ভালো বই পড়া খুবই দরকার।

৯. শব্দ ভান্ডার বাড়াতে সাহায্য করে

বই পড়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে আরো একটি উপকার হলো, এর মাধ্যমে আমাদের শব্দের ভান্ডার বাড়িয়ে তোলা।

যখন আমরা নতুন নতুন বিষয়ে পড়ি তখন সেখানে অনেক অজানা শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় হয় যেগুলি আমরা আগে শুনে থাকিনা।

ফলে আমরা অনেক নতুন নতুন শব্দ গুলো শিখতে পারি এবং এর বিভিন্ন অর্থ জানতে পারি।

এই শব্দ গুলোর প্রয়োগ করে আমরা মূল্যবান বাক্য বানাতে পারি যেগুলো আমাদের কর্মজীবনে স্পষ্টবক্তা হিসাবে কথা বলতে কনফিডেন্স দিয়ে থাকে।

এর ফলে আমরা নিজের মনের কথা গুলো অন্যদের সামনে সুন্দর করে তুলে ধরতে সক্ষম হয়ে থাকি।

তাই অধিক থেকে অধিক নতুন নতুন শব্দ গুলো জানার দারুন উপায় হলো বই পড়া।

 

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা এবং বই পড়ার গুরুত্ব গুলো বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছি। 

নিয়মিত বই পড়লে কি কি লাভ হতে পারে সেই বিষয়ে হয়তো আপনারা অনেক ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন।

বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আর্টিকেলটি অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন। 

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।

 

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top