আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিয়ে করার উপকারিতা, লাভ এবং অপকারিতা নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করতে চলেছি।

আমাদের সমাজে সামাজিক নিয়মে বিয়ে করাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এবং বিয়ের বন্ধনকে আমাদের সমাজে এক পবিত্র বন্ধন হিসাবে দেখা হয়। তাই প্রত্যেকটি ছেলে বা মেয়েকে এক না একসময় বিয়ের বন্ধনে নিজেকে বাঁধতে হয়।
প্রাচীন কালে বাল্য বিবাহের প্রচলন ছিল যদিও সময়ের সাথে সাথে এই বিবাহ আইনগত ভাবে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, এই ধরনের বিয়ের সমর্থন আজকের সমাজ কখনোই করে থাকেনা।
কিন্তু বর্তমান সময়েও প্রায় প্রচুর গ্রাম অঞ্চলের মেয়েদের খুব অল্প বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয়।
এমনিতে বর্তমানে শহর অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা নিজেদের কেরিয়ার বানাতে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে তাদের কাছে বিয়ে শব্দটি যেনো একরকম বিরক্তকর বিষয়।
কারণ তারা মনে করেন যে বিয়ে হলে তাদের সব স্বাধীনতা চলে যাবে এবং বিভিন্ন দায়িত্বে জড়িয়ে পড়বে তাই তারা বিয়ে শব্দটি এড়িয়ে চলতেই ভালো মনে করে থাকেন, আবার কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়েরা বিয়ে করলেও সে অনেক দেরিকরে করেন।
সব কিছুরই যেমন উপকারীতা এবং অপকারিতা থাকে, ঠিক তেমনই বিয়েরও উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটোই রয়েছে।
- বই পড়ার উপকারিতা, গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
- প্রেমিকার রাগ ভাঙ্গানোর উপায় গুলো
- বন্ধু বা বন্ধুত্ব মানে কি ?
তাহলে চলুন বন্ধুরা, দেরি না করে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিয়ের করার বিভিন্ন উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
বিয়ে করার উপকারিতা গুলো কি কি ?
বিয়ে করার লাভ বা উপকারিতা বলতে আমরা প্রত্যেকেই একটি বিশেষ বিষয়ে ভেবে থাকি, কি আপনিও সেই একি বিষয়ে ভাবছেন তো ?
কিন্তু, বিয়ে বলতে কেবল সেই একটিমাত্র লাভ বা উপকারিতা থাকছেনা জেবিষয়ে আমরা সকলে ভেবে থাকি, তবে এছাড়াও প্রচুর লাভ রয়েছে যেগুলো একটি বিবাহিত জীবনে অবশই পাওয়া যাবে।
বিয়ে করার সবথেকে বড়ো লাভ হলো জীবনভরের জন্য একজন প্রিয় মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে পাওয়া যায়।
১. জীবনের পথে একজন নতুন সঙ্গীর সমর্থন
প্রত্যেকজন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এই জীবনে চলার পথে একজন সঙ্গীর আবশ্যক আজ নাহয় কাল হয়েই থাকে। এমন এক সময় জীবনে অবশই চলে আসে যখন জীবনে একা একা আর ভালো লাগেনা।
কারণ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সকল ব্যাক্তিই চায় নিজের ভালো মন্দ, খারাপ লাগা, ভালো লাগা ইত্যাদি প্রত্যেকটি মনের ভাব নিজের প্রিয়মানুষের কাছে প্রকাশ করতে।
আর যখন দুজন মানুষের মনের মিল ঘটে তখন তারা নিঃসন্দেহে নিজের মনের কথাগুলো কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই একে আরেকজনের কাছে প্রকাশ করতে পারে।
এবং, দুজন দুজনের সুখ দুঃখে একসাথে থেকে নিজেদের জীবন সুন্দর করে কাটাতে পারে।
আর বিয়ে হলো সেই ববিত্র বন্ধন যার মাধ্যমে আপনি আপনার মনের মানুষকে চির জীবনের জন্য নিজের করে নিয়ে নিজের সাথে রাখতে পারবেন।
২. আপনার একাকীত্ব (Loneliness) দূর হয়
বিয়ে করার আরেকটি লাভ হলো আপনার একাকীত্ব (Loneliness) দূর হয়ে যায় এবং আপনার মন সবসময় খুশি হয়ে থাকে।
কারণ সারাদিন কাম কাজ করার পর যখন ঘরে যাবেন, তখন আপনার সাথে কথা বলার জন্য এবং আপনার ভালো-মন্দর খেয়াল রাখার জন্য আপনার পাশে আপনার প্রিয়জন দাঁড়িয়ে থাকবেন।
একটি সুস্থ বিবাহিত সম্পর্ক স্ত্রী এবং পুরুষ দুজনের জীবনকেই বদলে দেয়।বিবাহিত ব্যক্তিদের ডিপ্রেশন, চিন্তা এবং বিভিন্ন মানষিক সমস্যা অনেক কম হয়ে থাকে।
যদিও কখনও কখনও ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়ে থাকে, তবে আপনি যদি ভালোবাসা দিয়ে সেই ঝগড়ার সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন তাহলে আপনি জীবনে অনেক বেশি খুশি থাকতে পারবেন।
এছাড়া, বিবাহিত ব্যক্তিরা একা থাকা ব্যক্তির তুলনায় অনেক কম নকরাত্মক ভাবনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এবং নিজের সঙ্গীর সহায়তায় জীবনে অনেক উন্নতি করার সুযোগ পেয়ে থাকেন, তাই সঠিক বয়েসে বিয়ে করা আমার হিসেবে অনেক লাভজনক।
৩. সামাজিক সুরক্ষা লাভ
বিয়ে করার পর স্ত্রী এবং পুরুষ দুজনেই সামাজিক সুরক্ষা লাভ করে।
বিয়ের পর আপনি আর অবিবাহিত থাকেন না ফলে সমাজ আপনার উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঙ্গুল উঠানোর সুযোগ পায়না।
আমাদের সমাজে ডিভোর্স হওয়া বা অবিবাহিত ব্যক্তিদের, অনেক রকম সামাজিক প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এবং বিশেষ করে এটা মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
তাই সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য বিয়ে করা জরুরি।
৪. জীবনের প্রতি আরো বেশী সংবেদনশীলতা
বিয়ে করার পর প্রত্যেকটি ব্যক্তি নিজের জীবনের প্রতি আরো বেশী সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং নিজের দায়িত্বের অনুভব হয়ে যায়।
কারণ বিয়ে করার আগে ব্যক্তির উপর অনেক কম দায়িত্বভার থাকে এবং তাই সে জীবনটি অধিক সরল ভাবে নিয়ে কাটিয়ে যায়।
কিন্তু বিয়ের পর ব্যক্তির নিজের সাথে সাথে পরিবারের কথাও ভাবতে হয় ফলে ব্যক্তির উপর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।
এটা দেখতে গেলে ব্যক্তির জন্য অনেক ভালো একটি সময়, কারণ যখন দায়িত্ব অধিক থাকবে তখন আমরা অপ্রয়োজনীয় কাজে মন না দিয়ে কেবল নিজের পরিবারের ভালো ভবিষ্যৎ এবং নিজের পরিবারের স্বার্থের ক্ষেত্রে কাজ করে থাকি।
আর এখান থেকেই আমাদের জীবনে এক নতুন এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
৫. দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকবেন
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অবিবাহিত, একা এবং ডিভোর্স হওয়া ব্যক্তির তুলনায় বিবাহিত ব্যক্তিদের বয়স বেশি লম্বা সময়ের হয়।
বিবাহিত ব্যক্তিরা জীবনভর নিজের পার্টনারের থেকে ভাবনাত্মক সহায় পেয়ে থাকে এবং নিজের সুখ দুঃখ নিজের পার্টনারের সাথে শেয়ার করে নিজের মন হালকা করে নেন।
এছাড়া, বিবাহিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুজন দুজনের স্বাস্থ্যের অনেক যত্ন নিয়ে থাকে এবং অসুখ হলে ভালো করে দেখাশোনা করে থাকে।
তাই বিবাহিত ব্যক্তিদের জীবন একা থাকা ব্যক্তির তুলনায় বেশি সুখের হয়।
৬. বৃদ্ধ কালের সাহারা
বিয়ে করার ফলে দুজন ব্যক্তি দুজনের বৃদ্ধ কালের সাহারা পেয়ে যায়। কারণ সকল ব্যাক্তিই একদিন না একদিন বৃদ্ধ হবে এবং বৃদ্ধ বয়সে জীবন কাটানোর জন্য একজন সাহারার দরকার আমাদের প্রত্যেকের হবেই, তাই বিয়ে করা অবশই জরুরি।
৭. মা বাবা হওয়ার সুখ
বিয়ের পরই মা বাবা হওয়াকেই আমাদের সমাজে স্বীকৃত দেওয়া হয়।
তাই বিয়ের পরই একজন মহিলা মাতৃত্বের অনুভব করার সুযোগ পেয়ে থাকে এবং একজন পুরুষ বাবা হওয়ার আনন্দ পেয়ে থাকে।
বিয়ের পর বাচ্চাদের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং বাচ্চাদের সাথে জীবন কাটানোর এক অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায়।
কিন্তু অবিবাহিত ব্যক্তিরা এই সুযোগ এবং আনন্দ অনুভব থেকে বঞ্চিত থাকে।
চলুন, এখন আমরা বিয়ে করার অসুবিধা গুলো কি কি সেগুলো জেনেনেই।
বিয়ে করলে কি কি অসুবিধা হয়ে থাকতে পারে ?
এমনিতে জীবনের যেকোনো বন্ধনে কিছু না কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা অবশই থেকে থাকে। তবে, সব কিছুই নিজের মধ্যে রেখে বিষয় গুলোকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার কৌশল রাখা ব্যক্তি জীবনে খুশি থাকতে পেরেছে।
তাই, বিয়ে করলে যেভাবে লাভ এবং সুবিধা গুলো রয়েছে, ঠিক সেভাবে এর কিছু অসুবিধা গুলিও থাকতে পারে। তবে, এই অসুবিধা গুলো প্রত্যেকের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে।
১. ব্যক্তির স্বাধীনতা
বিয়ের পর আপনার স্বাধীনতার উপর নিষেধাজ্ঞা লেগে যায় কারণ বিয়ের পর আপনি নিজের ইচ্ছায় সব সিদ্ধান্ত নিলে চলবেনা।
আপনার পার্টনারের ইচ্ছা এবং খুশির ধ্যান আপনার রাখতে হয়। ফলে অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এগুলো নিয়ে প্রচুর ঝগড়া সৃষ্টি হয়ে যায়।
২. খরচ বেড়ে যায়
বিয়ের পর আপনার খরচও বেড়ে যায় কারণ বিয়ের পর আপনাকে নিজের স্ত্রীর দায়িত্বও নিতে হয় এবং বাচ্চা হওয়ার পর আপনার খরচ দ্বিগুন বেড়ে যায় এবং বেশি টাকা কামানোর চাপ আপনার ওপরে থেকে থাকে।
৩. দায়িত্ব বাড়ার সাথে সাথে চিন্তাও বাড়ে
বিয়ের পর আপনার দায়িত্ব বাড়ার সাথে সাথে চিন্তাও বেড়ে যায় কারণ বিয়ের পর নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে এবং ভবিষ্যত জীবনের কথা ভেবে অনেক বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
এটা সেই সময় যখন আপনি নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে পারবেননা, তবে কি করলে আপনার পরিবারের জন্য ভালো হবে, সেই হিসেবে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪. বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা সীমিত
বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী উভয় পক্ষেরই বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা সীমিত রাখতে হয় এবং পরিবারের প্রতি বেশি ধ্যান দিতে হয়।
প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না হলেও প্রায় অনেক বিবাহিত পরিবারে দেখা গেছে যে বিয়ের পর অনেক কম সময়ের মধ্যে পুরোনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়।
এর কারণ বিভিন্ন হতে পারে যদিও তখন আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চিন্তা করার সময় আপনার কাছে থাকেনা।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিয়ে করার উপকারিতা, লাভ এবং কিছু অসুবিধা গুলো জেনেনিলাম। আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের অবশই পছন্দ হয়েছে।
আর্টিকেলটি যদি সত্যি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।
আর্থিক অবস্থা ভাল হলে বিয়ে করা ঠিক আছে, আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে বিয়ে না করা উচিত