আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা, মেকআপ করার জিনিসের নাম ও দাম বা দাম সহ মেকআপ এর উপকরণ গুলোর নাম এর বিষয়ে জানতে চলেছি।
মেকআপ হচ্ছে মানুষের জীবনে স্টাইল স্টেটমেন্টের মতোই।
পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়, যে চায় না তাকে সুন্দর দেখতে লাগুক কিংবা তার দিকে কেউ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকুক।
আর, মেইকআপ হচ্ছে, সেই অস্ত্র যা মানুষকে সুন্দর তো করে তোলে বটেই, তার পাশাপাশি মানুষের ব্যক্তিত্বে নিয়ে আসে এক আলাদা মাত্রা।
এমন অনেক মেয়ে বা মহিলা রয়েছেন, যারা মেকআপ বলতে শুধু মাত্র লিপস্টিক, কাজল আর ফেস ক্রিমকেই বোঝেন।
কিন্তু, মেকাপের দুনিয়া অনেকটাই বড়, সেখানে কাজল, লিপস্টিক আর ক্রিম ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক উপকরণ।
আবার, এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা রীতিমতো মেকআপ পছন্দ করেন, কিন্তু মেকআপ করতে তাদের পার্লার ছুটতে হয় আর নাহলে প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্টের কাছে দৌড়োতে হয়, কেবলমাত্র তারা মেকআপ করতে পারেন না বা মেকআপ করার জিনিসের নাম গুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না।
তাই, আমাদের এই আর্টিকেলটি সেইসব মানুষ বা মহিলাদের জন্যে, যারা নিজেরাই নিজেদের মেকআপ করতে চান বা শিখতে চান।
এই আর্টিকেলটি আপনাদের মেকআপ-এর উপকরণ গুলোর নাম ও দাম সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা দেবে।
তাহলে, চলুন আমরা জেনে নিই, বেশ কতগুলো জরুরি মেকআপ এর জিনিসের নাম এবং তাদের দামের ব্যাপারে।
মেকআপ করার জিনিসের নাম ও দাম – (তালিকা)
মেকাপ এর উপকরণ গুলো সাধারণত ফেসের বা মুখের বিভিন্ন পার্টের জন্যে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
যেমন, মুখের জন্যে থাকে ময়েস্ট্রাইজার, চোখের জন্যে কাজল ও ঠোঁটের জন্যে লিপস্টিক।
এরকমই বেসিক প্রোডাক্ট ছাড়াও, ব্যবহারের প্রয়োজনে এবং বিভিন্ন মুখের অংশের জন্যে আরও নানান রকমের প্রোডাক্ট আছে।
তাই, আমরা সেই মুখের অংশ অনুযায়ী প্রোডাক্টগুলোকে ভাগ করে নিয়ে আলোচনা করবো।
১. মুখের মেকাপের জিনিস:
মুখের মেকআপ প্রোডাক্টের মধ্যে রয়েছে ময়েশ্চারাইজার, প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, কন্সিলার, ব্রাশ সেট, কন্ট্যুর, ব্রোঞ্জার, ব্লাশ ও হাইলাইট।
আসুন, সবিস্তারে জেনে নিই এই প্রতিটা প্রোডাক্টের ব্যাপারে –
ময়েশ্চারাইজার:
কাজ: আপনার মুখের ত্বক বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক আদ্রতা হারিয়ে ফেলে।
তাই, ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে, যাতে আপনার ত্বক কমনীয়তা না হারিয়ে ফেলে।
আর, মেকাপের বাকি প্রোডাক্টগুলো যাতে আপনার মুখের ত্বকে ঠিকভাবে বসে, সেই জন্যেও ময়েশ্চারাইজ করাটা জরুরি।
আপনার চামড়া যদি রুক্ষ ও শুষ্ক হয়, তবে মেকআপ সুন্দরভাবে বসতে পারবে না।
তাই সেই কারণেই এই ক্রিম খুবই জরুরি।
ময়েশ্চারাইজার অর্গানিক, আয়ুর্বেদিক ও কেমিকাল-বেসড হয়ে থাকে।
দাম: ৪০ টাকার উপর থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রাইমার:
কাজ: মেকআপ যাতে দীর্ঘ সময় ধরে ঠিক থাকে তাই জন্যেই আমরা মেকাপের আগে মুখে প্রাইমার লাগিয়ে থাকি।
আর, প্রাইমার ব্যবহার করলে আপনার স্কিনও মেকাপের ক্ষতিকারক কেমিকাল থেকে রক্ষা পায়।
দাম: ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
কন্সিলার:
কাজ: মুখে ব্রণর দাগ, একনি, বা স্পটস কিংবা ডার্ক সার্কলেস ঢাকতে কন্সিলার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
একটা ফ্ললেস লুক পেতে কন্সিলার খুবই জরুরি।
দাম: ৭২ টাকা থেকে শুরু করে ১২,০০০-১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।
ফাউন্ডেশন:
কাজ: আমাদের ত্বকের রং রোদের তাপে পুড়ে যাওয়ার কারণেই হোক কিংবা ত্বকের নিচে থাকা মেলানিনের কারণেই হোক, মুখের সব অংশের রং একরকম নাও হতে পারে।
আর, মেকাপ করলে এই নানারকম স্কিনটোন থাকার কারণে অনেক সময়ই দেখতে ভালোলাগে না।
তাই জন্যেই ফাউন্ডেশন আমাদের স্কিনটোনকে ইভেন বা একরকমের করতে সাহায্য করে।
তবে, নানা স্কিনটোনের মানুষের জন্যে নানা রঙের ফাউন্ডেশন ক্রিম পাওয়া যায়।
আর, আমাদের সবাইকে নিজের স্কিনের সাথে ঠিক ভাবে মিলে যায়, এমন ফাউন্ডেশন কিনতে হয়।
দাম: ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০০-৯০০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্রাশ সেট:
আপনি সবসময় আপনার আঙ্গুল ব্যবহার করে সব ধরণের মেকাপ এপ্লাই করতে পারবেন না।
তাই, সুষ্ঠুভাবে মেইকআপ লাগানোর জন্যে আপনাকে একটা ব্রাশের সেট রাখতে হবে।
একটা সেটে কম করে ২টা থেকে ১০-১২টা বিভিন্ন ধরণের ব্রাশ থাকতে পারে।
এই ব্রাশগুলো নির্দিষ্ট কাজ ও নাম থাকে, যেমন- আইশ্যাডো ব্রাশ, ব্লেন্ডিং ব্রাশ ও ইত্যাদি।
দাম: ৩৯ টাকা থেকে ৮০০০-৯০০০ টাকা পর্যন্ত।
কন্ট্যুর প্যালেট:
কন্ট্যুর আপনার চিক বোন আর চোয়ালের উপর ব্যবহার করতে হয়, যাতে আপনার ফেসের ফিচারগুলো বেশি করে ফুটে ওঠে।
আর, কন্ট্যুর করলে আপনার মুখটাও অনেকটা স্লিম দেখায়।
নাকের উপর কন্ট্যুর এপ্লাই করলে তা আপনার নাকটাকে একটা টোনড ও স্লিম লুক দেয়।
কন্ট্যুর কেনার বেস্ট টিপ্ হল আপনার হাতের ভিতর দিকে এই কনট্যুরের সোয়াচ এপ্লাই করে দেখুন, কোনটা আপনার স্কিনের সাথে ম্যাচ করছে।
দাম: ৭৭ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্রোঞ্জার:
কাজ: কন্ট্যুর জোনগুলোতে ভালোভাবে স্কিনের সাথে ব্লেন্ড করতে ব্রোঞ্জার ব্যবহার করা হয়।
দাম: ৮৩ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্লাশ:
কাজ: ব্লাশ মূলত গালের আপেল বা চিক বোনের পেশির উপর এপ্লাই করা হয়।
ব্লাশ আপনাকে ন্যাচারালভাবে গ্লো করতে সাহায্য করে।
দাম: ৭২ থাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।
হাইলাইটার:
কাজ: হাইলাইটারের প্রধান কাজ হল আপনার মুখের বেস্ট ফিচারগুলোকে প্রমিনেন্ট করে তোলা।
খুব সামান্য পরিমাণে আপনার নাক, চিক বোন ও কপালে হাইলাইট করলে আপনার মেকআপ এট্রাক্টিভ দেখায়।
দাম: ৬০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
২. চোখের মেকআপ:
চোখের মেকআপগুলোর মধ্যে পড়ছে, কাজল, আইলাইনার, আইব্রো কিট,আইশ্যাডো, মাস্কারা, ফেক আইল্যাশ, ও আইল্যাশ কার্লার।
কাজল:
কাজ: কাজল চোখের দুই পাতার উপরই আমরা পরে থাকি।
কাজল পরলে আমাদের চোখের সৌন্দর্যও বেশ বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে, ওয়াটারপ্রুফ, স্মাজপ্রুফ নানাধরণের কাজল মার্কেটে পাওয়া যায়।
এখন কালো ছাড়াও, বাদামি, সবুজ, নীল ও আরও অন্যান্য রঙের কাজলও অনেকে পরে থাকে।
দাম: ১০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
আইলাইনার:
কাজ: চোখের পাতার উপরে আমরা আইলাইনার পরলে আমাদের চোখ বেশ এট্রাক্টিভ লাগে।
সরু, মোটা, ক্লাসিক, উইং, ক্যাটআই নানাধরণের আইলাইনারের ডিজাইন দেখা যায়।
এই লাইনার নানা রঙের পাশাপাশি, নানা ধরণের শিশিতে পাওয়া যায়।
আপনি লিকুইড লাইনার, পেন্সিল লিনার কিংবা ব্রাশ লাইনারও নিতে পারেন।
দাম: ৩৬ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।
আইব্রো কিট:
কাজ: আপনার ভ্রুকে প্রমিনেন্ট করে তুলতে আইব্রো কিট একান্ত জরুরি।
আপনার ভ্রু প্লাক করা থাক বা না থাক একটা সুন্দর মেকাপের সাথে মানানসই একজোড়া ভ্রু না থাকলে, মেকআপ অসম্পূর্ণ দেখায়।
আর, ভ্রু দুটোকে হাইলাইট করলে আপনার মুখের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়।
দাম: ৮০ টাকা থেকে ৯০০০ টাকা পর্যন্ত।
আইশ্যাডো:
কাজ: আইশ্যাডোর প্রধান কাজ হল আপনার চোখ দুটোকে ডিফাইন করা, যাতে আমার সম্পূর্ণ ফেস ও লিপের মেকাপের সাথে চোখের মেকাপের সামঞ্জস্য থাকে।
আইশ্যাডো মূলত ম্যাট ও শিমার এই দুইধরনের হয়।
আপনি আপনার স্কিনটোন অনুযায়ী আইশ্যাডো প্যালেট নির্বাচন করতে পারেন।
দাম: ৬০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকার উপরে।
মাস্কারা:
কাজ: চোখের পাপড়ির ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি আপনার ন্যাচারাল আইল্যাশের উপর এটা এপ্লাই করতে পারেন।
দাম: ৪০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।
ফেক আইল্যাশ:
কাজ: অনেকের চোখের পাপড়ি বা আইল্যাশ অনেক ছোট-ছোট বা কম ঘনত্বের হয়।
কিংবা, কোনো পার্টিতে গেলে ড্রামাটিক আই মেকাপের্ জন্যে আপনি ফেক আইল্যাশ ব্যবহার করে আপনার আইল্যাশের ঘনত্ব বাড়াতে পারেন।
দাম: ৫০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।
এরপরে আমরা চলে যাবো, বেসিক লিপ মেকাপের সরঞ্জামের দিকে।
৩. লিপ মেকাপের জিনিস:
লিপি মেকাপের ক্ষেত্রে বেসিক দুটো জিনিস হল, লিপলাইনার ও লিপস্টিক।
লিপলাইনার:
কাজ: আমাদের ঠোঁটের সীমানাকে স্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্যে আর লিপের শেপটা ডিফাইন করতে লিপলাইনার বেশ উপকারী।
আর, নতুন মেকাপ যারা করেন, তারা অনেকসময়ই সুন্দরভাবে লিপস্টিক লাগাতে গিয়ে জিনিষটা ঘেঁটে ফেলেন।
তাই, আপনি যদি লিপলাইনার ব্যবহার করে লিপস্টিক লাগান, তাহলে ব্যাপারটা আপনার পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
দাম: ৫০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
লিপস্টিক:
কাজ: লিপস্টিক কি কাজে লাগে, মনে হয় আমরা কম-বেশি সবাই জানি।
আসলে, আমাদের সম্পূর্ণ মেকাপের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে একটা সুন্দর রঙের লিপস্টিক এপ্লাই করলে আমাদের ভালো ও আকর্ষণীয় দেখতে লাগে।
লিপস্টিকের অনেক ধরণ থাকে, যেমন বুলেট লিপস্টিক, ম্যাট, ড্রাই ম্যাট, শিমার, গ্লিটার ও ইত্যাদি।
দাম: ৩১ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
আমাদের শেষ কথা,,
এই কয়েকটি মেকআপের জিনিস দিয়ে আপনি নিজেই প্রফেসশনাল দের মতো নিজের মেকাপ সেরে ফেলতে পারবেন।
তবে, আশা করবেন না, যে একবার চেষ্টা করলেই বেস্ট মেকাপ করে ফেলবেন।
এইসব প্রোডাক্টের ব্যবহার আপনি ইউস করতে করতে নিজেই ধীরে ধীরে স্বচ্ছন্দ হয়ে যাবেন।
আর, প্রোডাক্টগুলোর দাম আপনি বিভিন্ন রেঞ্জেই পেয়ে যাবেন, তাই আরামসে আপনি আপনার পছন্দের মেকাপ সেরেই ফেলতে পারেন।
আমাদের আজকের মেকআপ করার জিনিসের নাম ও দাম নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
আপনাদের কাছে আর্টিকেলটি হেল্পফুল মনে হলে কমেন্টে তা জানাতে ভুলবেন না।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে বলা সমস্ত প্রোডাক্টের দাম সবসময় একই থাকবে, তা নয়। সময় বিশেষে কম-বেশি হতেই পারে। এই আর্টিকলে কেবলমাত্র আপনাদের একটা ধারণা দেওয়ার জন্যে এই দামগুলোর একটা তুলনামূলক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।)