প্রথমত সঠিকভাবে পড়াশুনা করার জন্য সব ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ থাকা খুব জরুরি।
কিন্তু এটি একমাত্র সম্ভব হয় যদি ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিতভাবে রুটিন মেনে পড়াশোনা করতে পারেন।
কারণ এমন অনেক ছাত্র ছাত্রী থাকে যারা বুঝে উঠতে পারেনা কিভাবে নিজেদের পড়াশুনা এবং অন্য কাজকর্ম ব্যালান্স করে চলতে হয়।
ফলে পরীক্ষার সময় অধিক পড়ার সত্ত্বেও সেরমভাবে রেজাল্ট ভালো করতে পারেনা।
ছাত্ররা পুরো বছর কোনো পরিকল্পনা ছারা পড়াশুনা এবং বাকি কাজ গুলো করে থাকে।
তাই নিয়মিতভাবে রুটিন হিসাবে পড়াশুনা করার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের প্রত্যেকটি কাজের সূচি তৈরি করা দরকার, এতে তারা বুঝতে পারবে কোন কাজগুলো বেশি জরুরি এবং কোন কাজগুলো অদরকারী।
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো সঠিকভাবে পড়াশুনা করার জন্য রুটিন বানিয়ে চলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং পড়াশোনার রুটিন কিভাবে বানাবো বা পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম গুলো কি কি।
তাহলে চলুন বন্ধুরা নীচে দেওয়া প্রত্যেকটি নিয়মগুলোর বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
পড়াশোনার রুটিন বানানোর উপায় এবং নিয়ম

নিচে আমি প্রত্যেকটি টিপস এবং নিয়ম গুলোর বিষয়ে বলবো যেগুলোর মাধ্যমে একটি সেরা রুটিন আপনি নিজের জন্য তৈরি করে নিতে পারবেন। তবে, রুটিন হিসেবে চলার জন্য সবচে আগে আপনাকে নিজের মনের মধ্যে পড়াশোনার ইচ্ছে জাগিয়ে তুলতে হবে।
১. সিলেবাস অনুযায়ী সব বিষয়ের লিষ্ট তৈরি করা
পড়ার রুটিন বানানোর সময় প্রথমে প্রত্যেকটি বিষয়ের বা সাবজেক্ট এর একটি লিষ্ট তৈরি করে নিতে হবে।
এরপর প্রত্যেকটি সাবজেক্ট এর সিলেবাস আলাদা আলাদা পাতায় লিখে নিতে হবে যাতে একটি সাবজেক্ট এর সাথে আরেকটি সাবজেক্ট মিশ্রিত না হয়ে যায়।
সব বিষয়ের সিলেবাস গুলো লিখা হয়ে যাওয়ার পর দেখতে হবে কোন সিলেবাসে কি কি টপিক রয়েছে এবং তারপর সেগুলো নোট করে নিতে হবে।
এতে, পড়ার সময় বার বার টপিক খুঁজে সময় নষ্ট করতে হবেনা।
পড়ার সময় যদি সিলেবাস নিয়ে বসা হয় তখন আধা সময় এগুলোতেই চলে যায় কিন্তু আগের থেকে যদি সব নোট করা থাকে তখন আমাদের জানা থাকে কোন বিষয়ে কি সিলেবাস রয়েছে।
ফলে, পুরো সময়টুকু পড়া শিখতে দেওয়া যায়।
২. প্রতিদিন একটি নিৰ্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসার চেষ্টা করা
পড়তে বসার একটি নির্দিষ্ট সময় পড়ার রুটিনে রাখা উচিত।
কারণ যখন আমরা প্রতিদিন এক সময়ে কোনো কাজ করে থাকি তখন এটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
তাই সময় হলেই আমাদের ব্রেইন সঙ্কেত দিতে থাকে কাজটি করার জন্য।
এখানে পড়ার সময় নির্দিষ্ট রাখার কথা এইজন্যই বলা হয়েছে কারণ আমরা যদি কোনো নির্দিষ্ট সময় ছাড়া যেকোনো সময়ে পড়তে বসি তখন আমাদের পড়তে মন পড়াতে বসবেনা ফলে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
পড়ার রুটিনে সময় লিখার সময় অবশ্যই স্কুল কলেজের কথা মাথায় রেখে রুটিন বানানো উচিত।
কারণ স্কুল কলেজ থেকে আসার পর আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ি আর ওই সময়ে যদি পড়তে বসা হয় তখন আমাদের ভালো করে পড়া মুখস্থ হবেনা।
তাই স্কুল কলেজের সময় হিসাবে সময় মিলিয়ে রুটিন বানানো দরকার।
৩. পড়ার জন্য শর্টট্রাম এবং লংগট্রাম গোল বানানো
আমাদের জীবনে প্রত্যেকের কিছু না কিছু গোল থাকা দরকার, কেননা এই গোল আমাদের লক্ষ পূরণ করতে সাহায্য করে থাকে।
তাই প্রত্যেকটি ছাত্র ছাত্রীদের পড়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্টট্রাম এবং লংগট্রাম গোল বানিয়ে চলা দরকার।
পড়ার রুটিন বানানোর সময় টেস্ট পরীক্ষা এবং ফাইনাল পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে রুটিন বানানো উচিত।
এখানে শর্টট্রাম গোল হিসাবে টেস্ট পরীক্ষাগুলো রুটিনে রাখার কথা বলা হচ্ছে। কারণ এই পরীক্ষাগুলো কিছু মাস পর পরই হয়ে থাকে। টেস্ট পরীক্ষার সিলেবাস কম থাকে তাই ওই হিসাবে শর্টট্রাম রুটিন বানিয়ে চলা দরকার।
ঠিক একই ভাবে লংগট্রাম গোলে ফাইনাল পরীক্ষাগুলো রুটিনে রাখা দরকার।
এবং এই রুটিন হিসাবে পুরো বছরের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
৪. প্রতিদিন রিভিসন করার সময় নির্ধারিত করা
পড়ার রুটিন বানানোর সময় রিভিসন করার জন্য অন্তত ৩০ মিনিট সময় প্রতিদিনের রুটিনে রাখা দরকার।
কারণ আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে বা সাবজেক্টের বই পড়ে থাকি।
তাই পরাগুলো যদি পরীক্ষার সময় ভালো করে মনেই রাখতে না পারি তাহলে পড়ে কি লাভ হবে।
এক্ষেত্রে, শেখা পড়া গুলো রিভিশন না দিয়ে যদি শুধু নতুন পড়াই মুখস্থ করা হয় তাহলে পরীক্ষার সময় শেখা পড়াগুলোও মনে থাকবেনা।
কিন্তু প্রতিদিন পড়ার সাথে সাথে যদি অল্প সময় আগেই শেখা পড়াগুলো রিভিশন করা যায় তাহলে পরাগুলো আমাদের মাথায় থেকে যায় এবং ফলে সহজে আমরা ভুলে যাইনা।
উদাহরণস্বরূপ যদি কোনো ছাত্র প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে পড়াশুনা করে তাহলে প্রথমের ৩০মিনিট আগের মুখস্ত করা পড়া গুলো রিভিশন দিয়ে তারপর বাকি বিষয়গুলো পড়া দরকার।
৫. পড়ার মাঝে ব্রেক রাখা দরকার
যেকোনো কাজ অনেক সময় ধরে করলে আমাদের বিরক্তি লেগে যায় আর এটা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
তাই পড়াশোনা করার ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে ব্রেক রাখা উচিত, আর এই ব্রেক এর সময় আপনাকে নিজের রুটিনে উল্লেখ করতে হবে।
যদি কোনো ছাত্র দিনে ৩ ঘন্টা পড়াশুনা করে থাকে তাহলে এক ঘন্টার অন্তর অন্তর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ব্রেক অবশ্যই নেওয়া দরকার।
কিন্তু ব্রেক নেওয়ার মানে এটা নয় যে আপনি টিভি দেখতে বসে যাবেন বা ফোনে গেম খেলবেন। এগুলো করলে আমাদের মন পড়া থেকে সম্পূর্ণ ভাবে ডাইভার্ট হয়ে যাবে এবং আর পড়াতে মন বসবেনা।
তাই যেখানে পড়তে বসা হবে সেখানেই অল্প সময় হেটে নেওয়া যায় বা মেডিটেশন করা যায়।
আপনি চাইলে কিছু রিলাক্স মিউজিক শুনতে পারবেন, এতে পরবর্তী সময়ে যখন আবার পড়তে বসা হয় তখন ফ্রেশ অনুভব করা যায় এবং পড়াতে অধিক মন লাগানো যায়।
৬. পুরো দিনের কাজের সূচি বানানো
পড়ার রুটিন বানানোর সময় আমাদের পুরো দিনের কাজ গুলো ভুলে গেলে চলবেনা।
তাই রুটিন বানানোর সময় প্রথমে পুরো দিনে কি কি কাজ করা হয় কত সময় ধরে করা হয় তার একটি সূচি বানিয়ে নিতে হবে।
যেমন সকালে স্কুল কলেজে যাওয়ার এবং আসার সময়, কোচিং সেন্টারে যাওয়ার সময়, খেলা ধূলা করার সময়, টিভি ফোন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক গেজেট ব্যবহার করার সময়, ঘুমানোর সময় ইত্যাদি প্রত্যেকটি কার্য্যর সঠিকভাবে সূচি বানিয়ে নিলে তখন ওই হিসাবে পড়ার রুটিন বানিয়ে নিতে পারবেন।
কারণ তখন আমাদের জানা থাকে যে কোন সময় কোন কাজ গুলো করতে হবে এবং কোন অদরকারী কাজ গুলোতে সময় না দিয়ে সেই সময়টুকু পড়াতে দেওয়া যাবে।
তাই রুটিন বানানোর ক্ষেত্রে কাজের সূচি বানানো আবশ্যক।
৭. ঘুমানোর এবং সকালে ওঠার একটি নির্দিষ্ট সময় রাখা
আমরা সকলেই জানি ভালো ঘুম না হলে কোনো কাজই ভালো করে করা সম্ভব হয়না, ফলে পুরো দিনটাই খারাপ যায়।
এর কারণ হলো, উচিত পরিমানে ঘুম না হলে পুরো দিন ক্লান্তিভাব লাগে, রাগ উঠে, ঘুম ঘুম ভাব হয়ে থাকে।
অনেক ছাত্রদের দেখা যায়, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে রাত জেগে জেগে পড়াশুনা করে থাকে ফলে ভালো করে ঘুম হয় না এবং পরীক্ষার সময় অনেকবেশি স্ট্রেস অনুভব করে থাকে।
তাই প্রথম দিক থেকেই আমাদের এটা মাথায় রেখে ঘুমানোর এবং সকালে ওঠার একটি নির্দিষ্ট সময় পড়ার রুটিনে রাখা উচিত এবং সেই রুটিন হিসাবেই অনুসরণ করে চলা উচিত।
তাই ভালো করে পড়াশুনা করার জন্য অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা প্রতিদিন ঘুমানো দরকার।
এটা হয়তো আপনারা অবশই জানেন যে, আমাদের মস্তিষ্কের আরামের দরকার অবশই হয়ে থাকে এবং মস্তিষ্ক কেবল তখন আরাম পায় যখন আমরা নিয়মিত উপযুক্ত পরিমানে ঘুমিয়ে থাকি।
তাই রাতে জলদি ঘুমানোর অভ্যাস করতে পারলেই সকালে জলদি উঠা সম্ভব এবং আমরা সকলেই জানি সকালে জলদি ঘুম থেকে উঠা খুব ভালো একটি অভ্যাস।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানলাম, পড়াশোনার রুটিন কিভাবে বানাবো এবং পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম।
যদি আপনি মন দিয়ে এবং ভালো করে পড়াশোনা করতে চাইছেন, তাহলে অবশই আপনার রুটিন বানিয়ে সেটিকে অনুসরণ করেই পড়াশোনা করা দরকার।
শেষে, আমাদের আজকের আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।