পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ কোনটি ? যদি আপনিও এই প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে চাইছেন, তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন।
কেননা, এখানে আমরা আজকে বিশ্বের সেরা ৭টি সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকা প্রকাশ করতে চলেছি।
এই বিশ্বের চেয়ে সুন্দর জায়গা আর কি হতে পারে!
তবে, যাই হোক না কেন এই পৃথিবীর খুব কম দেশেই, সেই মাত্রার চোখ ধাঁধানো, ও শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশ গুলোর মধ্যে যেগুলো সমগ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠ নমুনা, উজ্জ্বল স্থাপত্যের অধিকারী, সুবিন্যস্ত প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়ে থাকা গ্রাম, পার্ক, সুসজ্জিত শহর, ও তাদের স্থানীয় রন্ধনশিল্পের জন্যে মানুষের মন জয় করে নিয়েছে – সেইসব বিশেষ ৭টি দেশ সম্পর্কে আলোচনা করতেই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি উপস্থিত করা হল।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ কোনটি ?

তাহলে চলুন, নিচে আমরা সরাসরি পৃথিবীর ৭টি সুন্দতরম দেশের তালিকাটি দেখেনেই।
১. ইতালি:
‘ইতালি এমন একটি স্বপ্ন যা সারা জীবনের জন্য ফিরে আসে।’
– আনা আখমাতোভা (রুশী কবি)
অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ইতালিতে সর্বাধিক ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর উপস্থিতি; একে বিশ্বের সেরা ঐতিহাসিক দেশে পরিণত করে।
এটি পৃথিবীর এমন একটি দেশ, যেটি প্রাকৃতিক সম্পদ ও শিল্পকলা উভয় দিক থেকেই সমৃদ্ধ।
এই দেশের রাজধানী শহর হল রোম।
এর প্রতিটা শহরই অনন্যতা ও শিল্পে-সৌন্দর্যে অতুলনীয়।
ইতালির ভাসমান শহর, ভেনিস তার বিখ্যাত গন্ডোলা রাইডের জন্যে জনপ্রিয়।
এছাড়াও, ফ্লোরেন্সের মতো শহরের ক্যাথেড্রাল, রোমের কলিজিয়াম, অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, পিসার হেলানো টাওয়ার ও অন্যান্য হল তার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যে মনোরম জায়গা হল পসিটানো, লেক গার্ডা, ক্যাপ্রি, সিনুক টেরে, সোরেন্টো ও অন্যান্য।
দক্ষিণ ইউরোপ তথা সারা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইতালি হল যেন প্রাকৃতিক সৌন্দয্য ও শিল্পের একটা নিখুঁত মিশ্রণ।
২. জাপান:
‘কী অদ্ভুত ব্যাপার! এই চেরি ফুলের নীচে বেঁচে থাকা।’
– কোবায়শি ইসা (জাপানি কবি)
‘নিপ্পন’ অর্থাৎ সূর্যের দেশ জাপান, সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার জগৎবিখ্যাত চা অনুষ্ঠান, ক্যালিগ্রাফি এবং ইকেবানার (ফুল সাজানো) শিল্পকলার জন্য।
জাপানে প্রায় এক ডজনেরও বেশি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে।
এছাড়াও, জাপান নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও পরিষ্কার-পরিছন্ন শহর ব্যবস্থাপনার জন্যে সমগ্র বিশ্বে কাছে প্রসংশনীয়।
এখানকার মাউন্ট ফুজির সাথে প্রস্ফুটিত চেরি গাছের সারি ও শান্ত হ্রদের অবর্ণীয় সৌন্দর্য এখানকার সেরা প্রাকৃতিক সম্পদ।
সবুজ বনে ঘেরা গোল্ডেন প্যাভিলিয়নের মন্দির কিনকাকু-জির শান্ত পরিবেশ, প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় করে নিতে বাধ্য।
এই দেশের ঐতিহাসিক শিন্টো মন্দির, টোকিও ও ওসাকার নিওন-আলোর শহরগুলো রাতের বেলা বেশ উজ্জ্বল পরিবেশ তৈরী করে।
টেকনোলজির দেশ জাপান সুশির-ও জন্মস্থান বটে।
৩. সুইজারল্যান্ড:
‘সুইজারল্যান্ড একটি ছোট, খাড়া দেশ, যেখানে রাস্তার থেকে অনেক বেশি উপর-নীচ রয়েছে, আর পুরোটাই কাক্কু ঘড়ির শৈলীতে নির্মিত বড় বাদামী হোটেলগুলির স্থাপত্যের সাথে আটকে আছে।’
-আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (মার্কিন ঔপন্যাসিক)
এই পার্বত্য ইউরোপীয় দেশটি সমস্ত দিক থেকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
এখানে স্বপ্নের মতো সুন্দর উঁচু পাহাড়ের বুকে থাকা গ্রামগুলো একে বিখ্যাত করে তুলেছে।
এই দেশ তার ম্যাটারহর্ন পর্বত, লাউটারব্রুনেন ভ্যালি (৭২টি জলপ্রপাতের আস্তানা), জন্য চরম জনপ্রিয়।
এছাড়াও, এখানে সেন্ট মরিৎজ, একটি পোস্টকার্ড-যোগ্য শীতকালীন রিসোর্ট শহর রয়েছে; যা স্কি কোর্স ও প্রাণবন্ত খনিজ প্রস্রবনের কারণে বেশ বিখ্যাত।
জেনেভা ও জুরিখ হল এই দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দুটি শহর।
ইতালির সীমান্তে অবস্থিত ম্যাটারহর্নকে আল্পসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি এবং এই দেশের সবচেয়ে সুন্দর স্থান হিসাবে গণ্য করা হয়।
৪. আয়ারল্যান্ড:
‘আপনি যদি আইরিশ হওয়ার জন্য যথেষ্ট ভাগ্যবান হয়ে থাকেন। তবে, আপনি যথেষ্ট ভাগ্যবান!’
– আয়ার্ল্যান্ডীয় প্রবাদ
আয়ারল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অধিকারী একটি দেশ।
এর মৃদু ও আর্দ্র জলবায়ু এবং গ্রামাঞ্চলের সবুজ ক্ষেত্র ও প্রাণবন্ত মস গাছের উপস্থিতি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এখানের পাহাড়ের চূড়া ও শান্ত হ্রদগুলো মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
পাহাড় এবং তৃণভূমি ছাড়াও এই দেশ তার বালুকাময় সৈকত ও নৈসর্গিক পাথুরে উপকূলরেখার জন্যও খ্যাত।
এখানকার প্রাচীন সংস্কৃতি ও স্থানীয় রন্ধনপ্রণালীর অভিজ্ঞতা লাভ করার সেরা স্থান হল ডাবলিন ও কর্ক শহরগুলো।
গিনেস স্টোরহাউস আয়ারল্যান্ডের সবথেকে বেশি দর্শনীয় স্থান।
৫. সাউথ আফ্রিকা:
‘দক্ষিণ আফ্রিকা কখনোই কাউকে উদাসীন করে না। এর ইতিহাস, জনসংখ্যা, ল্যান্ডস্কেপ ও সংস্কৃতি- সবই দর্শকের সাথে, ছাত্রের সাথে, আফ্রিকার বন্ধুর সাথে কথা বলে।’
– তারিক রমজান (সুইস দার্শনিক)
আটটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও একুশটি জাতীয় উদ্যান আর মনোরম জলবায়ুর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে সবথেকে সুন্দর, দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত করেছে।
প্রায় ৩০০টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রয়েছে এই দেশে।
এখানে (ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক ও টেবিল মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্ক) দর্শনার্থীরা প্রাণীদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে সিংহ, কেপ মহিষ, গন্ডার হাতি, জিরাফ, জেব্রা, ও অনেক প্রাণী দেখতে পান।
সাউথ আফ্রিকার প্রধান প্রশাসনিক শহরগুলি মধ্যে অন্যতম হল প্রিটোরিয়া, কেপ টাউন ও ব্লুমফন্টেইন।
৬. ফ্রান্স:
‘ফ্রান্সে শুধুমাত্র দুটি জিনিস রয়েছে; যার দিকে আমরা বড় হওয়ার সাথে সাথে প্রবাহিত হই- বুদ্ধিমত্তা ও আচরণ।’
এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড (মার্কিন ঔপন্যাসিক)
ইউরোপের বৃহত্তম দেশ গুলির মধ্যে অন্যতম, এই ফ্রান্স প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সৌন্দর্য উভয়ের জন্যই ব্যপকভাবে পরিচিত।
ফ্রান্সের প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর কিছু জায়গা হল ইট্রেটাট ক্লিফস, স্ক্যান্ডোলা নেচার রিজার্ভ, পন্ট ডি’আর্ক, গর্জেস ডু ভারডন, মন্ট ব্ল্যাঙ্ক, আইগুইলে ডু ড্রু, কোট ডি গ্রানিট রোজ, দ্য ক্যামার্গ সল্ট ফ্ল্যাট ও অন্যান্য।
এই দেশের সবথেকে বিখ্যাত স্থান হল প্যারিস শহর।
এখানকার জগদ্বিখ্যাত স্থাপত্য আইফেল টাওয়ার, শিল্প (দ্য ল্যুভর), ও ফ্যাশন জগৎ সারা পৃথিবীর কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাখে।
শহরের বাইরে ফ্রান্সের তুষার-ঢাকা পর্বত, ভাইনইয়ার্ড, ও ল্যাভেন্ডারের ক্ষেত আর রৌদ্রোজ্জ্বল সৈকত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চুড়ান্ত নমুনা।
৭. নিউ জিল্যান্ড:
‘নিউজিল্যান্ডে আপনি যেখানেই যান, সেখানে কিছু না কিছু উত্তেজনাপূর্ণ থাকবেই।
এটি বিশ্বের রত্ন। যা পাগলামি থেকে অনেক দূরে, ও তাই আপনি এখানে শান্তি খুঁজে পাবেন। এটা শুধুই অত্যাশ্চর্য ছিল।’
-ওয়েস বেন্টলি (মার্কিন অভিনেতা)
দ্বীপ দেশ নিউ জিল্যান্ড হল অনেক অকল্পনীয় সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ও পরিবেশের অধিকারী।
ফিওর্ডল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক, টোঙ্গারিরো ন্যাশনাল পার্ক নিউজিল্যান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ স্থানগুলো মধ্যে অন্যতম।
এই দেশের সেরা কতগুলো প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর স্থান হল স্প্লিট অ্যাপল রক, লেক ম্যাথেসন, ব্রাউন ফলস দ্য ব্লু পুলস, শ্যাম্পেন পুল, ওয়াইটোমো গ্লোওয়ার্মস, টেন মাহুতা ফরেস্ট, প্যানকেক রকস, মোয়েরাকি বোল্ডার্স ও ইত্যাদি।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আমাদের আজকের বিষয়, সেরা সুন্দর দেশ নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ কোন গুলো নিয়ে লিখা লেখাটি ভালোলাগলে অবশ্যই তা কমেন্ট করে জানাবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, সেটাও কিন্তু কমেন্ট করেই জানিয়ে দিতে পারবেন।
শেষে, আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ গুলোতে শেয়ার করার অনুরোধ অবশই থাকলো।