মানুষের সাইকোলজি বোঝার উপায় গুলো কি – (সেরা ১০ টি)

কিভাবে জানবেন মানুষের সাইকোলজি ? বা সাইকোলজি বোঝার কি কি উপায় রয়েছে ? যদি আপনার মনেও এই প্রশ্ন কোনো না কোনো কারণে চলে এসেছে তাহলে অবশই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

মানুষের মনের মতো জটিল কোনো জিনিস এই পৃথিবীতে হয়তো আর কোনো কিছুই নেই। 

এই বিশ্বের প্রতিটা মানুষের মাথায় যে কত কোটি চিন্তা নিমেষে ঘটে চলেছে, তার খবর রাখা মনে হয় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার পক্ষেও অসম্ভব। 

তাইতো, আমরা মানুষের মনকে কোনো রকম অভিব্যক্তি বা প্রকাশ ছাড়া বুঝতে চাই আর এই কারণেই আমরা পড়াশোনা করি মানুষের মনস্তত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান কিংবা সাইকোলজি নিয়ে। 

মানুষের সামান্য কিছু অভিব্যক্তিগুলো কিংবা বাহ্যিক আচরণগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই, আপনি সহজে পড়ে নিতে পারবেন আপনার কাছে থাকা মানুষটির মনের কথা। 

দীর্ঘদিন গবেষণার মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানীরা এমন কিছু উপায় সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানিয়েছেন, যার সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার বিপরীতে থাকার ব্যক্তির মনের মধ্যে চলা চিন্তাভাবনার সম্পর্কে দ্রুত আঁচ করতে পারেন। 

মানুষের মন পড়তে পারার সবথেকে বড় সুবিধা হল এই যে, আপনি আপনার জীবনকে অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

যা, আপনার পেশাগত জীবন হোক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মতিগতি ধরিয়ে দিয়ে আপনার জীবনের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে আপনাকে অনায়াসেই মুক্তি দিতে পারে। 

আজকে আমাদের এই আর্টিকলে আপনাদের জন্যে থাকছে, এমন কয়েকটা সেরা মানুষের সাইকোলজি বোঝার উপায়, যার থেকে কোনোরকম কোনো পুঁথিগত জ্ঞান ছাড়াই আপনি আপনার সামনে থাকা মানুষের মন নিমেষের পড়ে বা বুঝে নিতে পারবেন।

তাই আসুন, আমরা সরাসরি চলে যাই, কিভাবে মানুষের সাইকোলজি বোঝা যাবে সেই সম্পর্কিত ১০ টি উপায় এর আলোচনায়।

মানুষের সাইকোলজি বোঝার সেরা ১০ টি উপায়:

মানুষের সাইকোলজি বোঝার উপায়
কিভাবে মানুষের সাইকোলজি বুঝতে হয় ?

একটি মানুষের মুখের ভাব ও তার শরীরের অঙ্গভঙ্গি থেকে তার বেশ কিছু স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া চট করে ধরে ফেলা সম্ভব। 

সেই কারণেই, আপনি একটি মানুষের মুখ বা শরীরের ভঙ্গি থেকেই তার স্বভাব সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়ে যেতে পারেন। 

তাই, মানুষের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে, আমরা এখানে কথা বলার সময় মানুষের বেশকিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর লক্ষ্য রাখার জন্যে পরামর্শ দিলাম, সেগুলো হল –

উপায়-১: হাসি দিয়ে যায় চেনা:

কোনো মানুষ যদি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসেন, তবে সেটা যে সময় আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ হবে, তা কিন্তু নয়। 

একটা মানুষ যদি মন থেকে আন্তরিকভাবে হাসেন, তবে তার মুখের লেগে থাকা হাসির সাথে সাথে চোখেও তার আন্তরিকতার প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। 

মানুষ মন থেকে হাসলে তার চোখের চামড়াও সংকুচিত হয় এবং চোখের নিচের চামড়া অল্প হলেও ফুলে ওঠে, তার ফলে খুব সহজেই ধরা যায়, যে মানুষটি মন থেকে হাসছেন কি হাসছেন না।

আর, কেউ যদি আপনার হাসির সাথে সাথে সমান ভাবে হাসতে থাকেন,

তাহলে বুঝতে হবে, তিনি আপনার প্রতি আগ্রহী এবং আপনার মনের ভাবনাগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন। 

আর, এর থেকে আপনি বুঝতে পারবেন, যে সেই ব্যক্তি আপনার প্রতি আন্তরিকতা বোধ করছেন এবং কোনোরকম সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ বোধ করছেন।

উপায়-২: কুঞ্চিত ভ্রুর রহস্য:

মানুষ কোনো বিষয়ে চিন্তিত থাকলে, অজান্তেই কিন্তু তাদের ভ্রু জোড়া সংকুচিত হয়ে ওঠে। 

কিংবা, কোনো বিষয়ে আমরা গভীর চিন্তা করলেও আমরা অনেক সময় ভ্রু জোড়াকে কপালে তুলেই ভাবি। 

এই লক্ষণ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, যে আপনার সামনের ব্যক্তি কোনো বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত কিংবা শঙ্কিত হয়ে আছেন। 

উপায়-৩: লাজে রাঙা:

মানুষের স্বাভাবিক লজ্জার প্রকাশ হল চোখ নিচু করে কথা বলা। 

আপনি খেয়াল করবেন, কেউ যদি আপনার সামনে লজ্জা পান, তাহলে সে আপনার চোখে চোখ রেখে কিছুতেই কথা বলতে পারবেন না।

এমনকি, লজ্জা পেলে মানুষ সাময়িক সময়ের জন্যে কথা বলাও ভুলে যেতে পারে। 

উপায়-৪: মিথ্যে ধরার সহজ রাস্তা:

সাধারণ মানুষ মিথ্যে কথা বলার সময় চোখ নিচু রেখেই কথা বলে। 

তবে, অনেকসময়ই এমন কিছু মানুষ থাকেন, যারা চোখে চোখ রেখে সহজেই মিথ্যে কথা বলে যেতে পারেন। 

সেই সময় ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, যখন এইসব মানুষ মিথ্যে বলেন, তখন তাদের চোখের দৃষ্টি অপলক ও স্থির থাকে। 

যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়, কারণ মানুষ একটানা তাকিয়ে থাকতে ও চোখের পাতা না ফেলে থাকতে পারেন না। 

তাই, খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি সহজেই মিথ্যে কথাগুলো ধরতে পারবেন।

উপায়-৫: রাগের বহিঃপ্রকাশ:

মানুষ রেগে গেলে মানুষের চোখে তার ছাপ সরাসরি পড়ে। 

মানুষ অতিরিক্ত রেগে গেলে তাদের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। 

চোখের নিচের পাতার পেশিগুলো শক্ত হয়ে ওঠে। 

অন্যদিকে, তাদের নাকের চামড়া কুঁচকে যেতেও দেখা যায়। 

আবার, অনেকের ক্ষেত্রেই তাদের ভ্রু জোড়া রাগের সময় দৃঢ় হয়ে গর্তে প্রবেশ করে।

উপায়-৬: কথা বলার সময় গলার স্বরের উঠা-নামা:

মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণাতে দেখা গেছে যে,

কোনো মানুষের গলার স্বর যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের উত্থাপনার সাথে সাথেই ওঠা-নামা করে, তবে তিনি নিশ্চয়ই সেই ব্যাপারটিতে আগ্রহ বোধ করছেন। 

বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, পুরুষরা তাদের আগ্রহের বিষয়ের ব্যাপারে আলোচনা করতে হলে গলার স্বর নামিয়ে ফেলেন আর মহিলাদের ক্ষেত্রে তারা গলার স্বর আরও তীক্ষ্ণ করে তোলেন।

উপায়-৭: মানসিক চাপের লক্ষণ:

মানুষ মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তার ঘাড়, মুখ ও কপালের পেশী কুঞ্চিত হয়ে থাকে। 

অতিরিক্ত চিন্তায় থাকলে মানুষের মনে হতাশা জন্মায় আর এর থেকেই তাদের পেশী শক্ত হয়ে থাকে।

উপায়-৮: ক্রস-লেগ পদ্ধতি:

সাইকোলোজিস্টরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন,

কোনো মানুষ যদি কথোপকথন করার সময় একপায়ের উপর অন্য পা রেখে ক্রস করে বসেন,

সেখানে বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, সে অন্য ব্যক্তির থেকে ভিন্ন মত পোষণ করছেন। 

কিংবা, এই শারীরিক ভঙ্গির দ্বারা তিনি নিজেকে মানসিক, শারীরিক এমনকি আবেগের দিক থেকেও গুটিয়ে নিতে চাইছেন। 

উপায়-৯: চোখে-চোখ রেখে মনের ভাব বোঝা:

মানুষের চোখের ভাষা মুখের ভাষার থেকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য। 

কারণ, মানুষের মুখের কথা মিথ্যে হলেও, তার চোখের ভাষা লোকানোর দক্ষতা এখনও তৈরী হয়নি। 

তাই, মানুষের মুখ মিথ্যে বললেও, চোখ কখনও মিথ্যে বলে না। 

তাই, আপনার সামনে থাকা মানুষের চোখে ভালো করে তাকান। 

সেখানে ভালোবাসা আছে না রাগ-না-দুঃখ আপনি নিজেই ধরে ফেলতে পারবেন।

উপায়-১০: নেতৃত্বমূলক আচরণের প্রকাশ:

কেউ আপনার উপর কতৃত্ব চালাতে চাইলে, সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যমে আপনি সহজেই ধরতে পারবেন। 

কথা বলার সময় তার বাচনভঙ্গিতে ঔদ্ধত্যসুলভ ভাব থাকলে, তবে ধরতে হবে তিনি আপনার উপর কতৃত্ব করার চেষ্টা করছেন। 

তার আচারে-ব্যবহারেও পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। 

যেমন, বেশি আঙ্গুল বা হাত নেড়ে কথা বলা, সরাসরি নিজের মতামত প্রকাশ করা, চোখের মাধ্যমে শাসন করার চেষ্টা, গলার স্বরে দৃঢ়তা বজায় রাখা ও ইত্যাদি। 

 

সবশেষে:

তবে, সবসময় মনে রাখবেন, কোনো মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝে ওঠা কোনো সহজ কাজ নয়। 

দিনের পর দিন সূক্ষ পর্যবেক্ষণ শক্তি ও অসংখ্য গবেষণার মাধ্যমেই মনোবিজ্ঞানীরা বেশির ভাগ সময় মানুষের চিন্তাভাবনা বুঝে ফেলতে সক্ষম হন। 

তাই, একদম শুরু থেকেই যে আপনি মানুষের চিন্তাভাবনা ডিকোড করতে সক্ষম হবেন, তা নয়। 

এই ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও ধৈর্য অনেকটা পরিমাণে বাড়াতে হবে। 

আর, দীর্ঘদিনের চেষ্টা ও অনেক মানুষের সাথে মেলা-মেশা করলে আপনার মানুষের ব্যবহার সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা তৈরী হওয়া স্বাভাবিক। 

এছাড়াও, মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝার উপায়গুলোর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কার্যকারিতা বাড়ানো। 

দেখবেন, যারা খুব বড় মাপের মেন্টালিস্ট হন, তারা মানুষের শারীরিক ব্যবহার, চোখ ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে থেকে সহজেই তাদের মনের মধ্যে কি চলছে তা ধরতে পারেন। 

সেক্ষেত্রে, এই প্রফেশনাল মেন্টালিস্টদের সাইকোলজি বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট চর্চা করতে হয়। 

তাই, আপনি যত এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন ও যত বেশি চর্চা করবেন, তত সহজেই আপনি মানুষের মন বোঝার ক্ষমতা লাভ করতে পারবেন। 

যদি, মানুষের মনকে পড়তে চান তবে অবশ্যই নানা ধরণের মানুষের সাথে মিশুন, তাদের হাব-ভাব মন দিয়ে লক্ষ্য করুন আর কোনোরকম কোনো সন্দেহের অবকাশ না রেখেই সাইকোলজি বিষয়ে লেখাপড়া করুন।

আমাদের আজকের মানুষের সাইকোলজি বোঝার উপায় গুলো নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল। 

লেখাটি পড়ে আপনাদের পছন্দ হলে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন আর কমেন্টে আপনার ভালোলাগা জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।

 

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top