১ লাখ টাকায় ব্যবসা: চলুন বন্ধুরা আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাদ্ধমে ১ লক্ষ টাকা বেয় করে কি কি ব্যবসা করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই।
যদি আপনারা ভাবছেন কিছু ছোটো খাটো ব্যবসা শুরু করবেন এবং তাই ছোট ব্যবসার আইডিয়া কিছু জেনেনিতে চাইছেন, তাহলে দেরি না করে নিচে দেওয়া business ideas under 1 lakh গুলো দেখুন এবং যেই ব্যবসা আপনার পছন্দ হয়ে থাকে সেটা করুন।
আজকাল সকলেই নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু ব্যবসা শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় অনেক টাকার দরকার এর বিষয়টা চলে আসে।
তাই ব্যবসা করতে অনেকে সাহস পায়না এবং টাকার ভয়ে ব্যবসার থেকে দূরেই থাকেন।
কিন্তু আজকে আমি অনেকগুলো ছোট ব্যবসার ধারণা (small business ideas) আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলো কেবল এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেই শুরু করা যেতে পারে।
তাহলে চলুন নিচে দেওয়া প্রত্যেকটি বেবসার বিষয়ে কিছুটা জেনে নেই।
ছোট ব্যবসার আইডিয়া যেগুলো ১ লাখ টাকায় করতে পারবেন
চলুন বন্ধুরা এবার নিচে আমরা সরাসরি জেনেনেই, ১ লক্ষ টাকা দিয়ে কি কি ছোট ব্যবসা করা যায় সেই প্রত্যেক ব্যবসার ধারণা গুলো (Best small business ideas under 1 lakh in Bangla).
১. ফুলের ব্যবসা
আজকের সময়ে ফুলের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে, বিয়ে বাড়ি ,পুজো বাড়ি,জন্মদিন বাড়ি, যেকোনো অনুষ্ঠান হোক না কেনো ফুলের ব্যবহার যথেষ্ট পরিমাণে হয়ে থাকে।
ফুলের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথম কাজ হলো একটি দোকান ভাড়া করতে হবে এবং পাইকারি দোকান থেকে বিভিন্ন রকমের রং বিরঙের ফুল উঠাতে হবে বা কোনো ফুল বাগিচার মালিক থেকে সরাসরি ফুল নেওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে দোকানটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে যাতে ক্রেতাদের দেখে ভালো লাগে।
এর সাথে আপনি কিছু ফুলের কাঁচা সামগ্রী এবং ছাড়া গাছ, ফুল লাগানোর টপ ইত্যাদি দোকানে রেখে সেগুলোকেও বিক্রি করতে পারবেন।
২. সেলাই (Tailoring ) ব্যবসা
ছোটো ব্যবসার মধ্যে টেলারিং ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসা যা কম টাকায় শুরু করা যেতে পারে।
এছাড়া আপনি চাইলে এই ব্যবসা নিজের ঘর থেকেও করতে পারবেন।
সেলাই ব্যবসা শুরু করার জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে একটি বা দুটো দর্জি এবং পিকো মেশিন, ইন্টারলক মেশিন, সূচিকর্ম (Embroidery) মেশিন ইত্যাদি দ্বারা এই ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।
আজকাল ডিজাইনার কাপড়ের চাহিদা অনেক বেড়ে চলছে তাই কম টাকায় ব্যবসা শুরু করার জন্য সেলাই ব্যবসা একটি ভালো ধারণা।
৩. গালামাল দোকানের ব্যবসা
ছোটো ব্যবসার মধ্যে গালামাল দোকানের ব্যবসা একটি ভালো ব্যবসা যেটা কম টাকা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
এমনিতে একটি বড় গালামাল দোকান দিতে প্রচুর টাকা খরচ হয়ে থাকে।
তাই, আপনাকে একটি ছোট্ট দোকান নিয়ে ছোট ভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে হবে।
দোকান খোলার আগে কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে, যেমন দোকান দেওয়ার জায়গাটি যাতে ভালো অবস্থানে (location) থাকে।
লোক জনের ভিড়ভাড় থাকা জায়গাতে দোকান নিলে সেটা অধিক ভালো।
তাই সবচে প্রথমে দরকার হবে একটি দোকান ভাড়া নেওয়ার এবং ভালো মানের জিনিস পত্র ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রাখার ব্যবস্থা করা।
এবং সাথে home delivery দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে পারলে সেটা আপনার ব্যবসার জন্য অধিক লাভজনক প্রমাণিত হতে পারে।
কারণ আজকাল কারো সময় নেই দোকানে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে জিনিস নেওয়া তাই home delivery সুবিধা থাকলে ক্রেতা বিক্রেতা দুইজনেরই সময় বেচে যায়।
৪. আঁচার এবং পাপড়ের ব্যবসা
আজকাল আঁচার এবং পাপর বানানোর বেবসা খুব ভালো চলছে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ব্যবসা করাটা অনেকটাই ভালো এবং সুবিধাজনক হওয়া দেখা গেছে।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়না, সর্বনিম্ন দশ হাজার বা বিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।
আজকাল সরকার থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েও এই ধরণের ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।
আঁচার এবং পাপড়ের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজন হোলো আঁচার এবং পাপরের কাঁচা সামগ্রী যেগুলো আপনাকে পাইকারি দোকান থেকে উঠাতে হবে।
দিনে দিনে কাজ বারার সাথে সাথে কর্মচারি রাখার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে যার ফলে ঘরের মহিলারা নিজেও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে এবং সাথে অন্য মহিলাদের কাজে লাগিয়ে তাদেরকেও স্বাবলম্বী করা যেতে পারে।
আজকাল গ্রামে গঞ্জে এই ব্যবসা খুব দ্রুত গতিতে চলছে।
৫. ফুড ভেন ব্যবসা
আজকাল ফুড ভেনের ব্যবসা চারিদিকে খুব ভালো ভাবে চলছে।
আপনারাও যদি এক লাখ টাকার ভীতরে কোনো ব্যবসা করবেন বলে ভাবছেন তাহলে এই ফুড ভেনের ব্যবসা করে ভালো টাকা মুনাফা করতে পারবেন।
এর জন্য প্রথম কাজ হলো আপনাদের একটি ফুড ভেন ভাড়া নিতে হবে এবং ফাস্ট ফুড খাবার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা সামগ্রী বিক্রেতা দের থেকে বেশি পরিমানে কিনে নিতে হবে।
এভাবেই নিজের পছন্দ অনুযায়ী খাওয়া বানিয়ে ফুড ভেনের মাদ্ধমে বিক্রি করে ভালো টাকা উপার্জন করা যেতে পারে।
৬. যান-বাহন পরিষ্কার করার ব্যবসা
আজকাল যান বাহন পরিষ্কার করার ব্যবসাও খুব ভালো চলছে কারণ আজকাল কারো কাছেই সময় থাকেনা নিজের গাড়ি বা বাইক ইত্যাদি পরিষ্কার করার।
তাই আজকাল সবাই নিজের যান বাহন Vehicle washing shop এর মধ্যে দিয়ে থাকেন সেগুলোকে পরিষ্কার করানোর জন্য।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজন হলো যান বাহন পরিষ্করণ করার মেশিন, জলের সাপ্লাই এবং বড়ো একটি জায়গার।
একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে অথবা বাড়ির সামনে বড় খালি জায়গা থাকলে এই ব্যবসা শুরু করা যেতে পারবে।
আজকাল মানুষ গাড়ি বা বাইক ধোয়ার জন্য ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা প্রজন্ত দিয়ে থাকে।
এর ফলে সারাদিনে bike এবং car ধুয়ে ভালো মুনাফা করা যেতে পারবে।
৭.চায়ের দোকানের ব্যবসা
কম টাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে এই ব্যবসা খুবই ভালো বিকল্প কারণ আমাদের দেশে চা কম বেশি সকলের প্রিয়।
তাই আপনারা যদি চায়ের দোকানের ব্যবসা করতে চান তাহলে বেশি না ভেবে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
এই ব্যবসা শুরু করতে প্রথমে প্রয়োজন হোলো এমন একটি ভালো জায়গা যেখানে অনেক মানুষ আসা যাওয়া করে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো বড় দপ্তরের পাশে, বাজার বা শপিং মল ইত্যাদি এই ধরণের ভিড়ভাড় থাকা জায়গায় দোকানটি খুলতে পারলে ভালো চলবে।
আপনাকে একটি ছোটো দোকান ভাড়া নিতে হবে এবং চা বানানোর জিনিস পত্র যেমন বাসন, চুলা, গ্যাস, দুধ, চিনি, চাপাতা ইত্যাদি যা যা দরকার কিনে নিতে হবে।
যদি একটি ভালো জায়গায় দোকান দিতে পারেন তাহলে এই ব্যবসা শুরু করে আপনারা যথেষ্ট পরিমাণে লাভবান হতে পারবেন।
৮.টিফিন সেবা (Service ) ব্যবসা
আজকাল কর্ম ব্যস্ততার ফলে বেশিরভাগ মানুষ টিফিন service centre থেকে খাওয়া এনে দুপুরের খাবার খেয়ে থাকেন।
তাই এই টিফিন সেবার ব্যবসা এখনের সময়ে খুবি জনপ্রিয় একটি ব্যবসা।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথম কাজ হলো FSSAI লাইসেন্স বের করতে হবে যাতে আপনার বানানো খাওয়া যে ভালো কোয়ালিটির এবং কারো ক্ষতি যে করবেনা এই বিশ্বাস প্রত্যেকের মধ্যে থাকে।
তাই খাওয়ার ব্যবসা শুরু করতে হোলে ফুড লাইসেন্স খুবই জরুরি।
টিফিন সেবা শুরু করার জন্য কিছু সামগ্রী দরকার হবে যেমন খাওয়া বানানোর বাসন, লাঞ্চ বাক্স, এলুমিনিয়াম ফয়েল, গ্যাস চুলা এবং সার্ভিস সেন্টার খোলার জন্য একটি জায়গার প্রয়োজন হবে।
টিফিন delivery করার ক্ষেত্রে কিছু কর্মচারী আপনাদের রাখতে হবে যারা লোকেদের দপ্তরে গিয়ে গিয়ে টিফিন ডেলিভারি করবেন।
এই ব্যবসা আজকাল ঘরের মহিলারা শুরু করে ঘর থেকেই কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারছে।
ব্যবসাটি শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে আপনার লক্ষবস্তু গ্রাহক করা হবেন সেটা ঠিক করতে হবে।
যেমন কলেজের ছাত্র ছাত্রী, জব (job) করা ব্যক্তিরা, সেই ব্যক্তিদের জন্য যারা ঘর থেকে অনেক দূরে একা থাকেন ইত্যাদি।
৯.মোবাইল ফোন রিপেয়ারিং ব্যবসা
যদি আপনি এক লাখ টাকার ভিতরে ব্যবসা শুরু করবেন ভাবছেন তাহলে মোবাইল ফোন রিপেয়ারিং করার ব্যবসা একটি খুব ভালো বিকল্প।
আমরা যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে ওই ব্যবসার বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার তাই এই ব্যবসার জন্য প্রথমে কোনো institute এ ৩ বা ৬ মাসের মোবাইল রিপেয়ারিং এর কোর্স আপনাকে করতে হবে।
সেখানে মোবাইল রিপেয়ারিং থেকে শুরু করে repairing এর ক্ষেত্রে কি কি tools ব্যবহার হয় সব রকম training দেওয়া হবে।
যদি আপনারা কর্মচারী রেখে কাজ করাতে চান তাহলে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের রাখা দরকার যারা ভালো করে এই কাজ জানেন।
কারণ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের না রাখলে একজন গ্রাহক একবার তো এসে যাবে কিন্তু কাজ ভালো না হলে দ্বিতীয়বার আর আসবেনা।
তাই ভালো technician রাখাটা এই ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথম কাজ।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য দরকার একটি জমজমাট জায়গায় দোকান ভাড়া নেওয়া।
আপনারা লিফলেট, পামপ্লেট ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের দোকানের marketing করতে পারবেন।
মোবাইল রিপেয়ারিং কাজের পাশা পাশি আরো ছোটো ছোটো জিনিস বিক্রী করতে পারেন যেমন head ফোন, পুরানা মোবাইল ফোন, মোবাইলের কভার, স্ক্রিন গার্ড ইত্যাদি।
দোকানে মোবাইল রিপেয়ারিং এর সাথে জড়িত সব রকমের spare parts থাকা খুবি জরুরি, কারণ spare parts ছাড়া কাজ করা যাবেনা তাই এদিকেও ধ্যান রাখতে হবে।
১০. Laundry এবং Dry Cleaning Service ব্যবসা
আপনারাও যদি লন্ড্রি সেবা এবং ড্রাই ক্লিনিং ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে প্রথমে এরম একটি জায়গা দেখে দোকান ভাড়া নিতে হবে যেখানে হোস্টেল, পিজি, হোটেল ইত্যাদি থাকে।
আজকাল সকলেই অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার ফলে কাপড় ধোয়াটা একটি বড় কাজ হয়ে দাড়িয়েছে আর তাই আজকাল সকলে ঘরের কাপড় জামা লন্ড্রিতে সার্ভিসে দিয়ে থাকে।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় step গুলো হলো প্রথমে দোকানের রেজিস্ট্রেশন করানো এবং এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা সঠিক কর্মচারী নিযুক্তি করা।
এর পর দরকার হোলো industrial washing machine, কাপড় সুখানোর মেশিন, রাসায়নিক পদার্থ, কাপড় ধোয়ার সাবান ডিটারজেন্ট ইত্যাদি জিনিসের প্রয়োজন হয়ে থাকবে।
এই ব্যবসা শুরু করার আগে marketing করা খুবই জরুরি কারণ মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসার বিষয়ে লোকেদের জানাতে পারবেন এবং গ্রাহক দের আকর্ষণ পেতে পারবেন।
আজকাল সবকিছুই ডিজিটেল হয়ে গেছে তাই অনলাইন অ্যাড দেওয়া, লিফলেট, পামপ্লেট এবং লন্ড্রি সেবার app বানিয়ে মার্কেটিং করা যেতে পারে।
সারাংশ,,
তাহলে আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এক লাখ টাকার ভিতরে কি কি ব্যবসা করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলাম।
আশা করি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা করার কিছু আইডিয়া নিতে লিখা আমার এই আর্টিকেলের দ্বারা আপনাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পেরেছি।
যদি ওপরে বলা আমাদের প্রত্যেকটি ছোট ব্যবসার আইডিয়া গুলো আপনাদের ভালো লেগে থাকে,
তাহলে অবশই আর্টিকেলটি নিজের প্রিয়জনের সাথে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, ছোট ব্যবসার ধারণা (Business Ideas With Low Investment) নিয়ে যদি আপনার মনে কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ রয়েছে, তাহলে অবশই নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।